অনলাইন ডেস্ক:
বারবার ভোটে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার আবারও ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সরকার মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন ভাতার টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইল ফোনে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’-এর মাধ্যমে প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেসমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যেদিন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়ে শপথ নিই, সেদিনই বলেছিলাম আমি মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করব। প্রধানমন্ত্রিত্ব আর কিছু না, প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে এটা যে আমি কাজ করার সুযোগটা পাচ্ছি। কাজ করার ক্ষমতাটা পাচ্ছি। কাজেই সেই মানুষের জন্য কাজ করব, মানুষের সেবা করব। আমার সরকার মানে মানুষের সেবক। সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই।’
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম আমাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও আমি বিরোধী দলে ছিলাম, তার পরও। সাধারণত আমাদের দেশে সেটা হয় না। সব সময় দেখা যায়, যারা ইমার্জেন্সি দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় যে থাকে তাকেই ধরে। কিন্তু সেই সময় আমাকে আগে ধরল।’
গ্রেপ্তারের পর ভবিষ্যতে দেশকে কিভাবে উন্নত, সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, কারাগারে বসেই সেই পরিকল্পনা করেছিলেন জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বসে থাকিনি। ওই কারাগারে যখন ছিলাম, প্রথম যখন গেলাম, তখনই আমি চিন্তা করলাম যে একদিন না একদিন তো এখান থেকে মুক্তি পাব, দেশের জন্য কাজ করব। তাহলে কী কাজ করব, কোন সালে কী করব, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা, স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা, মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করা, শিক্ষার হার বাড়ানো, খাদ্য উত্পাদন বাড়ানো থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া—এই সব বসে বসে চিন্তা করে করে আমি লিখে রাখতাম।’
এরপর ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করতে গিয়ে সেই সব পরিকল্পনাসহ অন্যান্য পরিকল্পনা যুক্ত করে ‘দিনবদলের সনদ’ ঘোষণা দেওয়ার কথা জানান সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্য উডস আর লাভলি, ডার্ক অ্যান্ড ডিপ। বাট আই হ্যাভ প্রমিজেস টু কিপ অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ, অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ। অন্ধকার, ঘন অন্ধকার বনায়ন…দেখতে সুন্দর। কিন্তু আমাকে এই ঘন অন্ধকারের সেই ঘন গভীর জঙ্গল পার হতেই হবে এবং আমার চলার পথ শেষ নেই। মাইলের পর মাইল আমাকে যেতে হবে। আমাকে ক্লান্ত হলে চলবে না, ঘুমালে চলবে না। আমার অভিষ্ট লক্ষ্যে আমাকে পৌঁছতেই হবে। আর সেই লক্ষ্যটা কী? সেই লক্ষ্যটা হলো, এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা।’
আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস রেখে তাদের বারবার ভোট দিয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে সমস্ত ভাতা দিচ্ছি, এটা যেন যথাযথ, সঠিকভাবে যে মানুষটাকে আমরা দেব তার হাতে পৌঁছায়। মাঝে যেন আর কেউ না থাকে। তাদের অর্থটা তাদের হাতে যাবে। তাদের যেভাবে খুশি তারা সেভাবে ব্যবহার করবে। সেটার ব্যবস্থা করতে দীর্ঘদিন ধরে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সেই ব্যবস্থাটা আপনারা নিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন বয়স্ক ভাতা শুরু করি, আমি এভাবে হিসাব করেছিলাম যে কেউ ভাতার ওপর শুধু নির্ভরশীল হোক সেটা আমরা চাই না। ভাতা পাবে কিন্তু যার কর্মক্ষমতা আছে সে নিজে কিছু কাজও করবে, একেবারে ঘরে বসে থাকবে না। যেন অন্তত ১০ কেজি চাল কিনতে পারে সেই হিসাবে আমরা ভাতা দেওয়া শুরু করি। তখন ১০ টাকায় এক কেজি চাল পাওয়া যেত। তাই আমরা ১০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া শুরু করি। এখন সেটা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে সংখ্যায় বেশিসংখ্যক লোক পাচ্ছে।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না, পাশপাশি প্রতিটি মানুষের ঘরে বিদ্যুত্ পৌঁছাতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশপাশি অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষ এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের এটাই লক্ষ্য থাকবে যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করা। আর সেই কাজ করতে গিয়ে শুধু সরকার একা না, যে যেখানে আছেন তাঁদেরও নিজ নিজ কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
প্রত্যেক এলাকার গৃহহীন, ভূমিহীনের তালিকা পেলে তাদের সরকার বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যাঁদের সামর্থ্য আছে, আপনারা নিজেরাও করে দেবেন। সবাই মিলে যদি আমরা করি, এই দেশটাকে আমরা নিশ্চয়ই এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ করতে পারব। এই বিশ্বাস আমার আছে।’
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সময় সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহেমদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপকারভোগী, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।