কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশ, ফুটপাত, বাজার এলাকার সামনে থেকে অবৈধ দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের ফল যেন স্থায়ী হয়, সেজন্য ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লাবাসী। দখলদার নির্মূলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সাজা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জোর দাবি জানিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, চলমান উচ্ছেদের পর পরিস্থিতি যদি আবারো পুরোনো অবস্থায় ফিরে যায়, তাহলে এসব বিশেষ অভিযান গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
অবৈধ দখল ও স্থাপনার কারণে কুমিল্লা নগরীর রাস্তায় রাস্তায় যানজট, ফুটপাতে পথচারী চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ নগরীর সৌন্দর্য্যহানি হয়ে আসছিলো। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত একমাস ধরে কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ, শাসনগাছা, স্টেশনরোড, ধর্মপুর, কান্দিরপাড়, নিউমার্কেট, রাজগঞ্জ, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ দখলদার-হকার-ছোট ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদে যে অভিযান চলছে, তা ইতিমধ্যে নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে, সবার সংশয় ও দাবি, কয়দিন পর আবার যেন পুরোনো চিত্র না দেখতে হয়।
কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, প্রশাসনকে অভিনন্দন যে, তারা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই কাজের ফল যেন মানুষ দীর্ঘদিন ভোগ করতে পারে, এই ব্যবস্থা করতে হবে। এই কাজের জন্য জেলা প্রশাসনকে আলাদা টীম গঠন করে সার্বক্ষণিক তদারকির দাবি জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, আমরা আগেও এমন অভিযান দেখেছি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোনো ফল পাইনি। দখলদারদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদেরকেও চিহ্নিত করতে হবে। পৃষ্ঠপোষকরা যদি আর সুযোগ না পায়, তবেই এই কাজে সফলতা আসবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি-কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে ফলাফল স্থায়ী করতে প্রশাসনিক স্বদিচ্ছা আর রাজনৈতিক আন্তরিকতার কোনো বিকল্প নাই। এছাড়া প্রশাসন, রাজনীতিক ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীরও যৌথ সমন্বয় থাকতে হবে। যদি এর ব্যতয় ঘটে, তাহলে পরিস্থিতি আবারো পুরোনো জায়গায় ফিরে যাবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ‘টিম কুমিল্লা’র অভিযানের কারণে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা স্টেশনরোডের রাস্তার পাশ দখল করে কেউ আর আগের মতো মালামাল রাখছে না। আগে এই এলাকাটিতে লোহালক্কড় ও ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীরা তাদের অতিরিক্ত পণ্য রাস্তার উপর রেখেই দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছে।রাজগঞ্জ থেকে চকবাজার রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপর কেউ যেন কোনো ধরনের পণ্য রেখে ব্যবসা না করতে পারে, সেই নির্দেশনার পর ফুটপাতের উপর থেকে মালামাল ও ছাউনি গুটিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজগঞ্জ বাজারের পূর্বগেট এবং দক্ষিণে ফলবাজারের গেটে ফুটপাত উদ্ধারে যে উচ্ছেদ অভিযান চলেছে, তাতেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম। টমছম ব্রিজ এলাকায় রাস্তার উপর থেকে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ এবং পথচারী চলাচলের জায়গা থেকে বিভিন্ন দোকানপাট, স্থাপনা উচ্ছেদ করে এলাকাটিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সক্ষম হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সর্বশেষ কান্দিরপাড় লিবার্টি মোড় ও টাউন হল মাঠ থেকে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চা দোকান ও হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। শহরের শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য্য রক্ষায় এই কার্যক্রমকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে সাধুবাদ জানিয়ে এর ফলাফল স্থায়ী করার দাবি তুলেছেন নগরবাসী।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর প্রতিবেদক কে জানান, ‘নগরীর রাস্তাঘাট থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। নগরবাসীর সুবিধার্থেই এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আশা করি, এই জায়গাগুলো আবার কেউ দখল করে বসবে না। আমরা এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছি।’ তবে তিনি জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ভাসমান হকার পুনর্বাসনে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলমুক্ত করা এলাকায় ফের স্থাপনা গড়তে বা হকাররা যেন পুনরায় বসতে না পারে, সে ব্যাপারে নজরদারি রাখা হবে। আগামী সোমবার জেলা প্রশাসকের সাথে সভা রয়েছে; সেখানে আমরা কুমিল্লায় চলমান অভিযান-পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে তা নির্ধারণ করবো।