অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ দীর্ঘকাল দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়াতেই বাংলাদেশ আজ মর্যাদাপূর্ণ, স্বনির্ভর এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে উঠছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে যে সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখছে, যেটি অতীতে ছিল না এবং বাংলাদেশ নাম বললেই ঝড়, বন্যা আর দারিদ্র্যের দেশ বলে বিশ্বে অনেকে মনে করত।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সভাপতিত্বকালে দেওয়া প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বস্তুত ইংরেজি নতুন বছর ২০২১ সালে এটাই ছিল মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে এই বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আজ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। তাঁকে চতুর্থবারের মতো ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী যেমন উদযাপন করেছি, তেমনি সরকারে থেকেই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের এবং দেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদ এবং বিশাল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়েই তাঁর সরকার দেশকে আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তুলতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যতটুকু আছে তা নিয়েই দেশের যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের কর্মক্ষম করে তুলব। আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’—নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করতে পারায় আজ বিশ্বে সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আসীন হয়েছি। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে বাংলাদেশ—এই একটি সিদ্ধান্তই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ আর পরনির্ভরশীল নয়।
এ সময় পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের জন্য তিনি নাম উল্লেখ না করে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতি অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করে তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ আঁকড়ে থাকার প্রচেষ্টাকে দায়ী করেন। শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পেছনে আমাদের দেশেরই স্বনামধন্য কিছু লোক জড়িত, যেটা আমাদের দুর্ভাগ্য।
তিনি বলেন, একটি ব্যাংকের সামান্য একটি এমডি পদের লোভে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেটি বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে, যে পদ্মা সেতু আমাদের দক্ষিণের ২২টি জেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতকরা ২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে, সেটি বন্ধের ব্যবস্থা নিয়েছিল। যা হোক একটি আঘাত আসলে হয়তো মানুষ সচেতন হয় এবং নিজের কাজ করা শেখে, আমরা সেটাই শিখেছি।
তিনি আরো বলেন, ওই আঘাতটা আসাতে আমরা হতাশ না হয়ে বরং সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিই এবং যেটা আজকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কভিড-১৯-এর জন্য জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর চলমান কর্মসূচি ঘটা করে পালন করতে না পারলেও দেশের সব জনগণকে একটি ঘর করে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের সব ভূমিহীন, নিঃস্ব, হতদরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে আর একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, সব ঘরে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দিয়ে প্রত্যেক ঘরে আমরা আলো জ্বালব।
তিনি আরো বলেন, জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদাগুলো তাঁর সরকার পূরণ করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে এবং সেভাবেই দেশকেও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে সেই যে বলেছিলেন—এই দেশের মাটি এবং মানুষ রয়েছে, তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন। সে কথা মাথায় রেখেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সকলকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন বছরে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন চলমান থাকার পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী সমাগত হওয়ায় এটিকে জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।