অনলাইন ডেস্ক:
জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিয়ম ভঙ্গকারী পুলিশ সুপারদের (এসপি) পরোক্ষভাবে সতর্ক করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে এসপিরা পতাকাবিধি মানছেন না।
বিধি অনুযায়ী, জাতীয় দিবসে জেলা পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের সময় বাদ্যযন্ত্রে জাতীয় সংগীত বাজার সঙ্গে ইউনিফর্মধারীদের স্যালুটরত অবস্থায় পতাকার দিকে তাকিয়ে থেকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) পতাকা উত্তোলন করবেন। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় দিবসে অনেক জেলায় ডিসিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এসপিরাও একসঙ্গে পতাকা উত্তোলন করছেন। বিষয়টি নজরে আসায় অফিস আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (বিধি) শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত আদেশটি গত ৩১ ডিসেম্বর জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদেশটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রতিরক্ষাসচিবসহ সব বিভাগ ও জেলা-উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘অতি জরুরি’ শীর্ষক ওই আদেশে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে জেলা পর্যায়ে জাতীয় দিবসসমূহে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের সময় কতিপয় জেলার ইউনিফর্মধারী ব্যক্তি বিধি অনুযায়ী জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন না করে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করছেন, যা বিধিবহির্ভূত।’ আদেশে বলা হয়েছে, ‘এমতাবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২-এর বিধি ৭(২৫)সহ অন্যান্য বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা আদেশে আরো বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রতীক। এর মর্যাদা সমুন্নত রাখা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২ (২০১০ সালের মে পর্যন্ত সংশোধিত) এ জাতীয় পতাকা সংক্রান্ত বিধানাবলি সন্নিবেশিত রয়েছে, যার প্রতিপালন বাধ্যতামূলক। পতাকা বিধিমালা ১৯৭২-এ উল্লিখিত দিবসসমূহে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।’ বাংলাদেশ পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২-এর ৭(২৫) ধারা অনুযায়ী, “যে ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেই ক্ষেত্রে একই সাথে জাতীয় সংগীত গাইতে হইবে। যখন জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং ‘জাতীয় পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, তখন উপস্থিত সকলে পতাকার দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবেন। ইউনিফর্মধারীরা স্যালুটরত থাকিবেন। ‘পতাকা’ প্রদর্শন না করা হইলে, উপস্থিত সকলে বাদ্যযন্ত্রের দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবেন, ইউনিফর্মধারীরা জাতীয় সংগীতের শুরু হইতে শেষ পর্যন্ত স্যালুটরত অবস্থায় থাকিবেন।”
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে ‘কতিপয় ইউনিফর্মধারী’ শব্দ দুটি দিয়ে মূলত নিয়ম ভঙ্গকারী এসপিদের ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেসব জেলার এসপিরা পতাকাবিধি ভঙ্গ করেছেন তাঁদের ছবিসহ প্রামাণিক অভিযোগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।
একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এখনকার বেশির ভাগ অফিসারই পড়াশোনা করেন না। আবার কিছু অফিসার আছেন জানলেও আইনবিধি মানার প্রতি মনোযোগ নেই। জাতীয় পতাকার সম্মানের বিষয়গুলো যদি ওপর থেকে মনে করিয়ে দিতে হয়, তাহলে এসব কর্মকর্তা পুরো জেলার দায়িত্ব কিভাবে পালন করেন?’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বিষয়ে শুধু এসপিদের দোষ নয়, ডিসিদেরও দোষ আছে। একজন কর্মকর্তা যদি তাঁর সীমা লঙ্ঘন করেন তখন ডিসি তাঁকে সেই বিষয়টি কেন ধরিয়ে দেন না, যদি ধরিয়েই না দিতে পারেন তিনি কেন ডিসিগিরি করেন।’ তাঁর মতে, এই আদেশ শুধু এসপিদের নয়, ডিসিদের জন্যও সতর্কবার্তা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পতাকাবিধি লঙ্ঘনের বিষয় গুরুতর। তাই আপাতত অফিস আদেশ জারি করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। খুব শিগগির পতাকাবিধিটি আরো সুস্পষ্ট ও যুগোপযোগী করার উদ্যোগও নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।