অনলাইন ডেস্ক:
আর দু-এক দিনের মধ্যেই যখন যুক্তরাজ্য থেকে করোনা ভাইরাসের অন্যতম টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনে- কার ‘কোভিশিল্ড’ অনুমোদনের সম্ভাবনা, ঠিক তখন দেশটি থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরনটি নিয়ে দেশে দেশে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দেশে শনাক্ত হচ্ছে করোনার নতুন এই ধরন; যা কভিড-১৯-এর চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়াতে সক্ষম—বলছেন কোনো কোনো বিজ্ঞানী। যদিও করোনার নতুন এই ধরনের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখনো চলছে গবেষণা। এর মধ্যেই বাংলাদেশেও করোনার নতুন ধরনটি নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এর কোনো অস্তিত্ব শনাক্ত করা যায়নি।
তবে করোনার এই ধরনটি দ্রুত বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হলেও এটি গুরুতর বা আগের ধরনের চেয়ে অতিরিক্ত কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বসে আছে অনেকটাই হাত গুটিয়ে। তারা নিজেরা যে ভাইরাসটির পরিস্থিতি দেখতে জেনোম সিকোয়েন্স করবে সেই ক্ষমতা তাদের নেই। গত জুলাইয়ের পর থেকে জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি উপাদান নেই।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘প্রথমত বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনার মিউটেশনভিত্তিক নতুন রূপটি শনাক্ত হয়নি। গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত যারা যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছে তাদের মধ্যে কেউ যদি এটা বহন করে নিয়েও এসে থাকে, তা আমরা ধরতে পারিনি।’ এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘করোনার নিত্যনতুন মিউটেশন হচ্ছে। এটি যেকোনো ভাইরাসের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি নিয়ে খুব বেশি মাতামাতির কিছু আছে বলে মনে করি না। কারণ যে মিউটেশনের মধ্য দিয়ে নতুন এই উপজাত শনাক্ত হয়েছে, সেটি নিয়ে যুক্তরাজ্যের তথ্য-উপাত্ত থেকে যতটুকু জানা গেছে, তাতে কোনো সিভিয়ারিটি বাড়েওনি, কমেওনি। ফলে প্রথমত এটা আগের চেয়ে অতিরিক্ত কোনো বিপজ্জনক নয়। পরের বিষয়টি হচ্ছে, এটি দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা যেখানে বলছেন এটি ৪০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ছড়াতে পারে, সেখানে আমাদের দেশের কেউ কেউ ৪০ শতাংশ বা মাঝের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সরাসরি সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ধরেই কথা বলছেন, যা মানুষকে বিভ্রান্ত ও বাড়তি উৎকণ্ঠিত করে।
ড. আলমগীর বলেন, উদ্বেগ বলতে একটি বিষয় থাকছে, সেটা হচ্ছে—যেসব আরটি-পিসিআর পদ্ধতির ল্যাবে সিঙ্গেল জিন ব্যবহার করা হয়, সেখানে এটি ধরা যাবে না। কিন্তু আমরা কখনোই সিঙ্গেল জিন ব্যবহার করি না। সব সময়ই দুই বা তিনটি জিন ব্যবহার করি। ফলে কোনো নমুনায় নতুন এই ধরনটি থাকলে সেটা আমাদের ল্যাবে ধরা যাবে।’ আইইডিসিআরে জিনোম সিকোয়েন্স না হওয়ার বিষয়ে ড. আলমগীর বলেন, ‘বাজেটের সমস্যাটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আমরা বাজেটের কারণে উপাদান সংগ্রহ করতে পারছি না বলেই জিনোম সিকোয়েন্স করতে পারি না।’
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজির অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তা হচ্ছে, এই ধরনটি শিশুদের মধ্যে ছড়ায় বেশি। আর এখন পর্যন্ত যে কটি টিকা আসছে সেগুলোর কোনোটিই শিশুদের জন্য নয়। ফলে যদি নতুন ধরনটি শিশুদের ক্ষতি করে তবে তা বর্তমান টিকায় রোধ করা যাবে না। অর্থাৎ নতুন এই টিকা দিয়ে বড়রা নিরাপদ হলেও ছোটরা অনিরাপদ থেকে যাবে বা ঝুঁকিতে থাকবে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।’ বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যসূত্র অনুসারে গতকালও কানাডা, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, সুইডেনে করোনার নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন ফ্রান্সে এটি শনাক্ত হয়। এ ছাড়া ডেনমার্ক, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডসেও এটা ধরা পড়েছে।