কুলাউড়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মিলিপ্লাজা মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল মনাফ (৩২) এর নিখোঁজের চারদিন পর গত ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১১:৩০ টার দিকে পার্শ্ববর্তী চাচার বসত ঘরের পিছনের বাথরুমের ট্যাংকির পাশের গর্তের মাটি সরিয়ে ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় চাচাতো ভাই-ভাতিজাসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া থানায় গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১১:৩০ ঘটিকায় সংবাদ আসে কুলাউড়া শহরের মিলিপ্লাজা মার্কেটের ‘মনাফ টেলিকম’ এর ব্যবসায়ী কুলাউড়া থানার ২নং ভুকশিমইল ইউনিয়নের মীরশংকর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আব্দুল মনাফ (৩২) কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহার মোবাইল ফোনও বন্ধ দেখাচ্ছে। তাৎক্ষনিক কুলাউড়া থানা পুলিশ ভিকটিম আব্দুল মনাফের বাড়ীতে গিয়ে বাড়ীর সামনে রাস্তায় কিছু কবুতরের খাবার ফিড ও রক্ত পড়ে থাকতে দেখে। তখন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও আব্দুল মনাফকে পাওয়া যায় নাই।
পরের দিন ১৩ ডিসেম্বর আব্দুল মনাফের বড় ভাই আজির উদ্দিন আব্দুল মনাফ নিখোঁজ সংক্রান্ত থানায় একটি জিডি করার পর পুলিশ পুনরায় আব্দুল মনাফকে উদ্ধারের জন্য সন্দেহজনক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু কোথাও আব্দুল মনাফকে খুঁজে পাওয়া যায় নাই। পরবর্তীতে ১৪ ডিসেম্বর পুনরায় আব্দুল মনাফের বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে আশপাশের সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করে উক্ত দিনও আব্দুল মনাফকে খুঁজে পাওয়া যায় নাই। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর পুনরায় কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চারপাশে খোঁজাখুঁজি করার সময় আব্দুল মনাফের চাচাতো ভাই শাহিনুর রহমান শাহিদ এর বসত ঘরের পিছনে বাথরুমের ট্যাংকির ভিতরে একটি ভোটার আইডি ভাসানো অবস্থায় দেখতে পায়। তখন ট্যাংকির ভিতর হতে উক্ত আইডি কার্ড উঠানোর পর দেখা যায় আইডি কার্ডটি ভিকটিম আব্দুল মনাফের। পরবর্তীতে উক্ত ট্যাংকির ভিতর হতে ভিকটিম আব্দুল মনাফের ম্যানি ব্যাগ, একটি স্কীটো সীমের ফ্রেম ও একটি সীমের ছেঁড়া প্যাকেট পেয়ে জব্দ করে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও কিছু গোপনীয় তথ্যে আব্দুল মনাফের চাচাতো ভাই শাহিনুর রহমান শাহিদ‘কে সন্দেহ হলে তাকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ভিকটিম আব্দুল মনাফকে খুন করার কথা স্বীকার করে জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর রাত ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম আব্দুল মনাফ ব্যবসা শেষে কুলাউড়া উত্তর বাজার হইতে সিএনজি গাড়ী যোগে ঘাটের বাজার সংলগ্ন কালাচান্দের পুলে নেমে বাম পাশের আংশিক ইট সলিংয়ের রাস্তা দিয়ে বাড়ীতে আসার পথে রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকায় ভিকটিমের বাড়ীর সামনের রাস্তায় পৌঁছলে পূর্ব হইতে ওৎ পাতিয়া বসে থাকা আসামী শাহিনুর রহমান শাহিদ ও তার সহযোগীরা লোহার পাইপ দিয়া একই উদ্দেশ্যে ভিকটিম আব্দুল মনাফকে মারপিট শুরু করে। একপর্যায়ে আসামীগণ লোহার পাইপ দিয়া ভিকটিম আব্দুল মনাফের মাথায় স্বজোরে আঘাত করলে ভিকটিম আব্দুল মনাফ ঘটনাস্থলে মৃত্যু বরণ করে। আসামীগন ভিকটিমকে খুন করে খুনের বিষয়টি গোপন করার উদ্দেশ্যে মৃত দেহ ধরাধরি করিয়া আসামী শাহিনুর রহমান শাহিদ এর বসত ঘরের পিছনের বাথরুমের টাংকির পাশে নিয়া গর্তের ভিতর মাটি ও খড় দিয়া ঢেকে লুকিয়ে রাখে।
আসামীর উক্ত তথ্য এবং তার দেখানো মতে গত ১৫ ডিসেম্বর রাত ১১.৩০ ঘটিকার সময় আসামী শাহিনুর রহমান শাহিদ এর বাড়ীতে উপস্থিত হইয়া স্থানীয় জনগনের উপস্থিতিতে আসামী শাহিনুর রহমান শাহিদ এর বসত ঘরের পিছনের বাথরুমের ট্যাংকির পাশের গর্তের মাটি সরাইয়া ভিকটিম আব্দুল মনাফের মৃতদেহ উদ্ধার করিয়া সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পূর্বক লাশ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, মৌলভীবাজারে প্রেরণ করা হয়। সাথে ঘটনায় জড়িত অপর আসামী ২। সামছুদ্দিন (৪২), পিতা-মৃত আইয়ুব আলী, ৩। আতিকুর রহমান চান মিয়া (৫০), ৪। মোঃ ফজলু মিয়া (৪৫), উভয় পিতা-মৃত মাহমুদ আলী, ৫। ফয়েজ আহমদ (২২), পিতা-ফজলু মিয়া, ৬। জাহাঙ্গীর আলম (২৩), পিতা-মৃত চুনু মিয়া, সর্ব সাং-মীরশংকর, ০২নং ভূকশিমইল ইউপি, থানা-কুলাউড়া, জেলা-মৌলভীবাজার‘দের আটক করাহয়। ভিকটিমের পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে থানা পুলিশ ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। গত ১৬ ডিসেম্বর ময়না তদন্ত শেষে ভিকটিম আব্দুল মনাফের মৃতদেহ তার পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।