কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়া জেলায় ছোট বড় ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে শত্রুমুক্ত হয় । হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইটের আওতায় ২৫ মার্চ রাতে যশোর থেকে পাক বাহিনী এসে কুষ্টিয়া দখল করে নেয় এবং ৩০ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারি করে সশস্ত্র অবস্থায় টহল দিতে থাকে কুষ্টিয়া শহরে। সান্ধ্য আইন ভেঙে মুক্তিকামী মানুষ বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। শুরু হয় যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর চুড়ান্ত বিজয়ের পাঁচ দিন আগে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জেলাকে শত্রুমুক্ত করেন। একদিকে স্বজনের গলিত মরদেহ আর সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আর্তনাদ সবকিছুকে ম্লান করে সেদিন বিজয়ের আনন্দে মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক কুমার ঘোষ জানান, ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ভোর রাতেই পাক হানাদারদের আক্রমণের শিকার হয় কুষ্টিয়া। প্রতিরোধ যুদ্ধের মুখে ১ এপ্রিল রাতে পাক বাহিনী কুষ্টিয়া ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর দফায় দফায় প্লেন হামলা চালিয়ে ১৬ দিন পর আবারও কুষ্টিয়া দখল করে নেয় পাক বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর তুমুল লড়াই চলে। এর মধ্যে ২৬ নভেম্বর সবচেয়ে বড় সম্মুখ যুদ্ধ হয় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল করীম বলেন, নয় মাস ধরে যখন থেমে থেমে যুদ্ধ হয়, তখন বাঙালি নিধন আর গণহত্যার উৎসবে মেতে উঠে পাক বাহিনী। ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ কুষ্টিয়া শহরের বিহারী কলোনির কোহিনুর ভিলার ১৬ জন শহীদ হন। এটি এ জেলার একটি পরিবারের উপর সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা। প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বলেন, দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে হানাদার পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ করে যে সব বীর যোদ্ধারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের সমাধি হিসেবে কুমারখালী, বংশীতলা, বিত্তিপাড়াসহ জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক গণকবর রয়েছে। এসব স্থানে নির্বিচারে হাজারো ব্যক্তিকে গণহত্যা করা হয়েছে।কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বংশীতলাযুদ্ধসহ ২২টি যুদ্ধ শেষে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী কুষ্টিয়া দখল নিতে আসছিল। ঠিক তখন ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস বিমান চত্বরের মেইন রাস্তার ওপর পাক বাহিনীর অ্যাম্বুশে পড়ে তারা। শুরু হয় ত্রিমুখি যুদ্ধ। শহীদ হন মিত্র বাহিনীর ৭০ জন। এর আগে ৪ ডিসেম্বর খোকসা, ৭ ডিসেম্বর আমলাসদরপুর, ৮ ডিসেম্বর মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা থানা ও ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী থানা পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়। এ বিজয়ের দিনটিকে উদযাপন করতে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাস্কৃতিক সংগঠন করোনা ভাইরাসের কারণে স্বল্প পরিষরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।