মানবাধিকার দিবসের অঙ্গীকার : আগামীর বিশ্ব হোক মানবিক বিশ্ব প্রত্যায় নিয়ে বি.এস.এফ’র পথসভা ও র্যালিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রীতির বন্ধুত্বময় মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণ করতে হলে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। এটি নির্দিষ্ট কোন দেশ ও জাতির সমস্য নয়। সমগ্র বিশ্ব আজ এ ব্যধিতে আক্রান্ত। এই সমস্যা নিরসনে বিশ্বের সকল দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের সচেতন মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের উদ্যোগে বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায়,এবং মানবাধিকার বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে বিশ্ব শিরোনামে এক পথসভা ও র্যালীতে তারা এসব কথা বলেন।
বিএসএএফ এর প্রধান সমন্বয়ক মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী’র সভাপতিত্বে পথসভা ও র্যালীতে বক্তব্য রাখেন এবং র্যালীতে অংশগ্রহণ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিল, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, আওয়ামী যুব লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মানিক লাল ঘোষ, দক্ষিণ বাংলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি মিজান শাজাহান, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, বিএসএফ’র সমন্বয়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক শেখ জনি ইসলাম, বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান দেশ, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান এম.এ ভাসানী, ওলামা লীগের মুখপাত্র ক্কারী মাওলানা আসাদুজ্জামান, ওলামা লীগ নেতা মাওলানা ইলিয়াস চৌধুরী, মুফতী হাফিজুর রহমান, বিএসএফ’র সদস্য নাফি উদ্দিন উদয় সহ অন্যান্য।
পথসভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্ম-গোঁড়ামীর উগ্রতা আজ বিশ্বে যে মহাব্যধিতে রূপ নিয়েছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী হিংস্র চক্র মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে চরমভাবে। তারা তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নানা ধরণের নতুন নতুন অপকৌশলও অবলম্বন করে থাকে। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝে ওঠা খুবই কঠিন। কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সেবামূলক ব্যানার ব্যবহার করেও মানবতাবিরোধী তৎপরতা চালায় সভ্যতা বিধ্বংসী এই মানুষরূপী হিংস্র সম্প্রদায়। বিশ্বে মানবিকতা বিকাশের ক্ষেত্রেও মানবতাবিরোধী চক্র অন্তরায়।
বক্তারা আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দেশ, ধর্ম ও রাজনৈতিক দল কিংবা সামাজিক সংগঠনের নামই তাদের মূল পরিচয় নয়। তাদের আসল পরিচয় হলো তারা আপাদমস্তকে মানবতাবিরোধী হিংস্র চক্র। তারা বর্ণচোরা। বিভিন্ন নামে তারা সমাজে অবতীর্ণ হয়ে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত যে সমস্ত দেশে বর্বরোচিত নৃশংস মানবাধিকার লঙ্ঘনের নারকীয় তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে সবকটির সাথেই এরা কোন না কোন নামে করেছে। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখেছি এই অপচক্রের সাথে বিশ্বের কোন কোন দেশের সরকারও জড়িত। রাষ্ট্র বা সরকার যখন সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মানবতাবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে তখন দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। অবনতি ঘটে আইন-শৃঙ্খলার। মানুষ ভোগে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায়। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা হয় মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্ত।
বিশ্বে কয়েক বছরে যে সমস্ত দেশে জঙ্গি হামলাসহ সাম্প্রদায়িক হিংস্র অপযজ্ঞে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে নৃশংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীন সরকার কর্তৃক উইঘুর মুসলিম হত্যা, নারী ধর্ষণ, জোরপূর্বক গর্ভপাত, বন্ধ্যাকরণ, ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা সহ প্রায় ২১ লক্ষ মুসলিম নাগরিক বন্দি। মিয়ানমার সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইঙ্গিতে সেনাবাহিনীর দ্বারায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বর্বরোচিত মানবতাবিরোধী নৃশংস গণহত্যাসহ নানাহ ধরণের সহিংস তাণ্ডব। বেলুচিস্তানে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বেলুচ সিন্ধু প্রদেশ ও পসতুন মুসলিমদের উপর মানবতা লঙ্ঘনের চরম সহিংস লীলা।
নেতৃন্দ আলো বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙ্গালির উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হায়েনার মানবতা ভূলুণ্ঠিত গণহত্যা সহ নৃশংস নানানমূখী নির্যাতন ও নিপিড়ন। এছাড়াও বাংলাদেশে বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে ৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা। জমাত-বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ এর ২১ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে উদীচী হামলা, ৬৩ জেলায় একসাথে ৫ শতাধিকের ওপরে সিরিজ বোমা হামলা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা হামলা, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা ও বিভিন্ন মাযার-দরগায় বোমা হামলাসহ নানাহ জঙ্গি তাণ্ডব। তাছাড়াও পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা কর্তৃক মুম্বাইয়ের হোটেল তাজসহ ১১ টি স্থানে জঙ্গি হামলার ঘটনাটিও উল্লেখিত।
তাই আজ ১০ ডিসেম্বর ২০২০ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আমাদের অঙ্গিকার হোক। আমরা আগামীর বিশ্ব গড়বো মানবিক বিশ্ব। যে বিশ্বে আর গঠবেনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো মানবতাবিরোধী নৃশংস কোন তাণ্ডব।