অনলাইন ডেস্ক:
ছোট প্রকল্পগুলোতেও মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারার কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রকল্প সংশোধন করে সময় ও খরচ বাড়ানোর বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘এগুলো বন্ধ করুন।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘সব প্রকল্পে এমন দেরি হয় কেন? সব প্রকল্প যেন যথাসময়ে শেষ হয় সেই ব্যবস্থা নিন। কেন বিলম্ব হচ্ছে, সেটার কারণ অনুসন্ধান করুন।’
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশোধনের জন্য উত্থাপিত একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এই নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, গতকাল একনেকে তিন হাজার ৯০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর অর্থায়ন পুরোটাই সরকার করবে।
জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি করে সংশোধনের জন্য এদিন একটি প্রস্তাব বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। এর ওপর আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, সব প্রকল্পে দেরি হচ্ছে কেন?
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এখন নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারায় ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ১০৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রস্তাব একনেকে তোলা হয়।
ড. শামসুল আলম বলেন, “প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় সরাসরি প্রকল্প পরিচালকের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, প্রকল্প শেষ করতে না পারার কারণ কী? কিন্তু প্রকল্প পরিচালক বৈঠকে উপস্থিত না থাকায় অন্য কেউ আর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর দেননি। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। সব প্রকল্পে দেরি হওয়ার কারণ কী? এটা একটা ছোট টাকার প্রকল্প। এটা তো এত দিন লাগার কথা না।’”
জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘প্রকল্প তো শেষ হওয়ার পথে, সময় আরো দুই বছর বাড়াচ্ছেন কেন? ৬৮ কোটি টাকাকে ১০৯ কোটি টাকা করা হচ্ছে সময় বাড়ানোর জন্য।’” প্রকল্প পরিচালককে ডেকে ওই প্রস্তাব পর্যালোচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সকল প্রকল্প যেন যথাসময়ে শেষ হয় সেই ব্যবস্থা নিন। এবং কেন দেরি হচ্ছে, সেই কারণ অনুসন্ধান করুন।’
বৈঠকে সংশোধনের জন্য তোলা ‘চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প নিয়েও প্রধানমন্ত্রী ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন বলে জানান শামসুল আলম। ২০১৭ সালে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলা এবং বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সড়ক প্রশস্ত করতে ১০৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এখন প্রকল্পের ব্যয় ১৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় উন্নীত করে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
ড. শামসুল আলম বলেন, “প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য উপস্থাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০১৭ সালে এক বছরের জন্য এই প্রকল্প নিলেন। এই প্রকল্প তো এত দিন লাগা উচিত হয়নি। এটা তো পুরনো সড়ক ছিল। চাইলেই তো এটা আপনারা করে ফেলতে পারতেন। এত দিন সময় কেন লাগল? আবার রিভাইজ (সংশোধন), আবার টাকা বাড়ানো—এগুলো বন্ধ করেন। এ ধরনের যে খাত, এটা আপনারা বন্ধ করেন। প্রকল্পের জন্য যে সময় নেবেন, সে সময় শেষ করা উচিত। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে আসেন আর ব্যয় বাড়িয়ে নিয়ে আসেন, এটা আর হতে পারে না।’
এরপর আর এ ধরনের প্রকল্পের মেয়াদ এভাবে বাড়ানো হবে না বলেও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন বলে জানান ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘যখন যে প্রকল্প নেওয়া হবে, সেই মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করতে হবে, এটা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন।’
দক্ষিণাঞ্চলের সব সড়কের মাস্টারপ্ল্যান করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, “পদ্মা সেতু হয়ে গেলে ওই দিকে পায়রা বন্দর হচ্ছে, সেনানিবাস আছে, পদ্মা সেতু হয়ে গেলে উন্নয়ন কার্যক্রমে একটা নতুন গতিশীলতা তৈরি হবে। তিনি বলেছেন, ‘সে কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পুরো এলাকার মাস্টারপ্ল্যান করেন। কী কী রাস্তাঘাট আছে। সেগুলোতে অনেক ভারী যানবাহন যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করে এগুলোকে পুনরাকৃতি করুন। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সেটা করা উচিত।’ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন যে, এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক অনেক বেড়ে যাবে। এটা বাড়ছেই। এখন থেকেই পুনর্গঠনের, পুনর্নির্মাণের ও শক্তিশালী করার কাজ শুরু করতে হবে। পদ্মা সেতু হলে এই এলাকায় গতিশীলতা বাড়বে।”