Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ-আওয়ামী লীগ

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ-আওয়ামী লীগ

অনলাইন ডেস্ক:

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ওই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদে নেমেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন। পৃথক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে বাড়াবাড়ি না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও তরুণ প্রজন্মের অনেকে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সোচ্চার। তাঁরা বিষয়টিকে সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখছেন না।

উদ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আমরা উদ্রবাদী গোষ্ঠীকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা অনেক করেছেন, এনাফ ইজ এনাফ, এবার থামুন। বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু মানে মুক্তিযুদ্ধ, আর বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আক্রান্ত  করা। আমি উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আমাদের কর্মীদের শান্ত রেখেছি, বেশি বাড়াবাড়ি করলে কেউ চুপ করে ঘরে বসে থাকবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারো স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।’

ওবায়দুল কাদের গতকাল রবিবার নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি তাঁর ঢাকার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল ভাস্কর্যবিরোধীদের প্রতি স্পষ্ট ভাষায় কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘যদি কেউ মনে করেন, তাঁরাই অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাঁদের ভুল ধারণা।’ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নাম উল্লেখ না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশে কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না।’ গতকাল  সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন প্রতিক্রিয়া জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের এক আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর যারা আঘাত হেনেছে, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জনগণের দাবি। তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে, তাদের আর এক চুল ছাড় দেবেন না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যারা ওয়াজ মাহফিলের নাম করে, টাকার বিনিময়ে ওয়াজ করে, নবীজির ঠোঁট নাড়ানো দেখিয়ে নবীজিকে অবমাননা করে, সেই মামুনুল হকদের প্রতিহত করবেন। তারা ওয়াজ মাহফিলে বসে যদি কোনো রাজনৈতিক আলোচনা করে, যদি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো কথা বলে, আপনারা ওই ওয়াজ মাহফিল প্রতিহত করবেন। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দেওয়া হলো, যেখানে ওয়াজ-মাহফিল হবে, খবর পেলে আগে থেকে ওই জায়গায় অবস্থান নেবেন। ’

ছাত্রলীগ সভাপতি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরো বলেন, ‘হুজুরদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে, আপনাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার পেছনে আপনাদের মদদ আছে। আপনারা সেই শ্রদ্ধার জায়গায় আঘাত হেনেছেন। মামুনুল হকরা জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রমুখ।

ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি থেকে মৌলবাদী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এদিকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাটিকে সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখছেন না। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান তার ফেসবুক পেজে গতকাল লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার প্রাথমিক উদ্যোগ। সজাগ হোন দ্রুত। দেশদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিন। তা না হলে পরবর্তীতে তারা অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠবে।’

বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা ও তরুণ লেখক মোজাফফর হোসেন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এইটা দেখতেই বাকি ছিল। মুজিববর্ষে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া কোনো দিনই মৌলবাদীদের শহর ছিল না। কাঙাল হরিনাথ, লালন, রবীন্দ্রনাথ, মীর মশাররফ হোসেন, রাধা বিনোদ পাল, প্যারী সুন্দরী, বাঘা যতীনের শহর এটা। শাসনক্ষমতায় যখন একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগ, তখন বঙ্গবন্ধুই যখন নিরাপদ না, বাউল ও লালন অনুসারীদের অবস্থা ভেবে দেখুন। কয়েক দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যে একটি অংশ ভাঙার ঘটনা ঘটে। টার্গেটগুলো দেখেছেন?’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া অনেকের।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply