কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :-
শীতের চিরায়ত প্রকৃতিতে বাংলার গৃহবধুরা এখন কুমড়োর বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। লোকায়ত ঐতিহ্যানুসারে বাংলার শীতকাল কুমড়োর বড়ি তৈরির মৌসুম। শীতকালে সারিবদ্ধ ভাবে বসে গ্রামের মেয়েরা হাতের বিভিন্ন ছোয়ায় ডালার উপর কুমড়োর বড়ি দিয়ে থাকে।শীতের খাবার-দাবার ও রান্না করা বিভিন্ন তরকারির সাথে কুমড়োবড়ি যেন খাবারের আলাদা স্বাদ নিয়ে আসে। বর্তমানে নানা ধরনের খাবারের প্রচলন হলেও লোভনীয় খাবারের তালিকায় কুমড়োর বড়ির অবস্থান এখনও প্রথম সারিতে। লোকজ এই খাদ্য ঐতিহ্যকে এখনো রক্ষা করে চলেছে বাংলার গৃহবধুরা।বৃহত্তর কুষ্টিয়া গ্রামীণ জনপদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এখন চোখে পড়ে কুমড়োর বড়ি তৈরি ও শুকানোর দৃশ্য। কুমড়োর বড়ি তৈরিতে বিশেষ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। দুদিন আগে বড়ির উপকরণ মাসকলাই ডালে সারা রাত পানিতে ভেজানো হয়। চামচ বা কুরনি দিয়ে কুমড়া কেটে আগে থেকে কুরে রাখা হয়। ভেজানো ডাল ও কুমড়ো পানিতে ধুয়ে আলাদা ঢেঁকি অথবা শিলপাটায় পেষা হয়। তারপর শীতসকালের মিষ্টি রোদ উঠলে পেষানো কুমড়ো ও ডাল একত্রে মিশিয়ে কাদার মতো করে নেট অথবা কাপড়ের উপর হাতের ছোঁয়ায় লাইন করে বড়ি বানিয়ে বসানো হয়। বড়ি বসানো শেষ হলে বাড়ির উঠানের মাচায়, ঘরের চালে বা ঘরের ছাদে রোদের তাপে শুকানো হয়। রোদ হলে সপ্তাহ খানেক পর কুমড়োর বড়ি রান্না করে খাওয়ার উপযোগী হয়।গজননীপুর গ্রামের গৃহবধু সুফিয়া বেগম বলেন, ‘রোদ ভালো না হলে কুমড়োর বড়ি শুকানো যায় না। ভালো রোদ না পেলে বড়িতে ছত্রাক এবং দুর্গন্ধ হয়ে খাওয়া যায় না। এজন্য কুমড়োর বড়ি তৈরির জন্য রোদেলা দিনের সঠিক সময় বেছে নিতে হয়।’বর্তমানে কুমড়োর বড়ি স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩শ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের অনেক গৃহবধু বাড়তি আয়ে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে শীত মৌসুমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বড়ি তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। অনেকে মৌসুমী ব্যবসা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন এই কাজকে। গ্রামের গৃহবধুদের অনেকেই মনে করেন, বাড়িতে বসেই সংসারের কাজের ফাঁকে ও অবসর সময়ে কুমড়োর বড়ি বিক্রির একটু বাড়তি আয় অভাবের সংসারে আর্থিকভাবে সহায়ক। ফলে আবহমান গ্রামবাংলার শীতকালের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ কুমড়োর বড়ি তৈরিতে সকাল বেলা গ্রামের অধিকাংশ গৃহবধকে ব্যস্ত হতে দেখা যায়। ঘরবাড়ির নিয়মিত কাজ শেষে বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন গৃহবধুরা।