কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়া চিনিকলে প্রভিডেন্ট ফান্ড দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মিলের সদ্য বহিষ্কৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার মুর্শেদ সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানকে চাকরি হতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় ।বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা স্বাক্ষরিত এক আদেশে এমডি গোলাম সারওয়ার মুর্শেদ কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় । বুধবার (১৮ অক্টোবর) অপরাহ্ণে এই আদেশ প্রদান করা হয়েছে বলে জানা যায়।আদেশে বলা হয়, কুষ্টিয়া চিনিকলে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি এবং মালামাল সরবরাহকারীর বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয় । তৎপ্রেক্ষিতে সদর দপ্তরের ২ নভেম্বর তারিখের আদেশ মোতাবেক অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য BSFIC সদর দপ্তর কর্তৃক একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।তদন্ত কমিটি বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রধান কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে । তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পিএফ ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি হিসাবে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানো, রেজিস্ট্রেশন স্বাক্ষর করা, অবসরগ্রহণের ২/১ মাস পূর্বে পিএফ সদস্যের নিজ অংশ এবং মিলের অংশের যোগফলের ৯০-৯৫% শতাংশ ঋণ হিসেবে প্রদান করা এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ফান্ডের চেক প্রদান কালে তাদের নিকট থেকে মিলের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক অর্থ আদায় করণের অভিযোগ উঠে ।১৩.৩৩% হারে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের নিকট থেকে ইউনিয়নের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক ঘুষ হিসাবে অর্থ আদায় করার বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নীরব থাকা এবং এ বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরেও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা কিংবা সদরদপ্তর কে অবহিত না করার গুরুতর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বি এস এফ আই সি কর্মচারী চাকুরী প্রবিধানমালা ১৯৮৯ এর (১) ধারা অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হইল । সাময়িক বরখাস্ত কালে তিনি নিয়ম অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন।এদিকে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে কুষ্টিয়া চিনিকলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে মিলের CBA সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কুষ্টিয়া চিনিকলে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ও মালামাল সরবরাহকারীর বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয় ।তৎপ্রেক্ষিতে দর দপ্তরের ২ নভেম্বর তারিখের আদেশ মোতাবেক অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য BSFIC সদর দপ্তর কর্তৃক একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ।কমিটি বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রধান কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পেশ করে । তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিধি বহির্ভূতভাবে তিন কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানো, রেজুলেশন করা, নিয়ম ভেঙ্গে পিএফ ফান্ডের সদস্যদের টাকা চিনি ব্যবসায়ীদেরকে প্রদান এবং মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ফান্ডের অর্থ প্রদান কালে তাদের নিকট থেকে ১৩.৩৩% হারে ঘুষ আদায় করার দণ্ডনীয় অপরাধের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৪(২) ধারা অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হইল । সাময়িক বরখাস্ত কালীন সময়ে তারা খোরাকি ভাতা প্রাপ্ত হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয় ।এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাতে এই খবর কুষ্টিয়া চিনিকল এলাকায় পৌঁছালে মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে ।উল্লেখ্য কুষ্টিয়া চিনিকলের চিনি বিক্রয়ের লোকসান মেটাতে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে মিলের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন, মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীর পিএফ ফান্ডের ফাইনাল বিল থেকে ১৩.৩৩% হরে চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন, চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনের ১৩.৩৩% হারে কর্তন, পিএফ ফান্ডের ঋণের টাকা উত্তোলনে ১৩.৩৩% টাকা গ্রহণের অভিযোগ উঠে ।এই বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে মিলের প্রধান কার্যালয় থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি মিলে এসে গত সপ্তাহে তদন্ত করে ফিরে যায় । সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বুধবার (১৮ নভেম্বর) কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা যায় ।