যশোর প্রতিনিধি: পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের ভাগ্নে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক, ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর লালীত সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজীসহ হাজারো অপকর্মের হাত থেকে পরিত্রান এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। খুলনা বিভাগের একমাত্র নারী উপজেলা চেয়ারম্যান যশোর জেলা যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি নাজমা খানম বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টায় যশোর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, উপজেলার শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু সংখ্যক গাছ বিক্রির জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন প্রকাশ্যে নিলাম আহবান করেন। সে মোতাবেক ১৩ অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরীসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নিলাম শুরু হয়।
তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে অন্যান্য দরদাতার ন্যায় আমার প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান ও সবুজ কর নামে দুইজন ব্যবসায়ী নিলামে অংশ নিতে সেখানে হাজির হন। কিন্তু এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচায্যের ভাগ্নে উপজেলা যুবলীগের আহবয়ক ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর লেলীয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান ও সবুজ করকে নিলামে অংশ নিতে বাঁধা দেন। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে হাবিব এবং সবুজকে বেধড়ক মারপিট করে তাদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে সন্ত্রাসীরা ঐ দুই ব্যবসায়ীকে স্কুলের একটি কক্ষে আটকিয়ে রাখে। নাজমা খানম বলেন, এ খবর পেয়ে আমি উপজেলা পরিষদ থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সন্দীপ ঘোষ এবং আমার ব্যক্তিগত সহকারি মনিরুল ইসলাম নয়নকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বাচ্চুর সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে সন্দীপ ঘোষ এবং মনিরুল ইসলাম নয়ন গুরুতর আহত হয়। এ সময় ঠেকাতে গেলে সন্ত্রাসীরা আমাকে লাঞ্চিত করে। এ ঘটনায় আমি সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখসহ থানায় মামলা দিলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি।
কি কারনে প্রতিমন্ত্রী এবং তার ভাগ্নের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়লেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমা খানম অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে আমাকে পুতুল চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিমন্ত্রী তার ভাগ্নে ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুকে লেলীয়ে দিয়ে পরিষদে একক কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করেন। আমি তাদের সকল অপকর্মের প্রতিবাদ করায় প্রতিমন্ত্রী ও তার ভাগ্নে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে আমাকে পদচ্যুত(চেয়ারম্যান পদ থেকে সাসপেন্ড) করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। দলীয় প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম আরো বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর নেতৃত্বে সরকারি ত্রাণের চাল পাচারের ঘটনায় আমি প্রতিবাদ করি । ফলে প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্রয়ে বাচ্চু প্রতিশোধ নিতে আমার বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে বাচ্চু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী কয়েকবার আমার ওপর হামলার পর জীবন নাশের হুমকি দিয়েছে। এ ব্যাপারে বাচ্চু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি জিডি এবং মামলা করা হয়েছে। ত্রাণের চাল পাচার মামলার চার্জশিটভূক্ত পলাতক আসামি হলেও প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনে বাচ্চু সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সকল অপকর্ম করে যাচ্ছে। অথচ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছেনা।
শুধু তাই নয়, চাল পাচার মামলায় চার্জশিটভূক্ত আসামি হবার পরও বাচ্চু এখনও স্বপদে বহাল রয়েছে। যুবলীগ আহবায়ক ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর লালীত সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজীসহ হাজারো অপকর্মের হাত থেকে পরিত্রান এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মিকাইল হোসেন, হরিহরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা কামাল, হরিদাসকাটি ইউপি সদস্য প্রনব কুমার, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সন্দীপ ঘোষ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক কাজী তাজাম্মুল হোসাইন টিটো, প্রদীপ দাস, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।