কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া শহর আ’লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খাঁন, তার ছেলের রনিসহ ভাতিজা-ভাগ্নিদের বিরুদ্ধে মোহিনী মিলের স্থাপনা ও সরকারি সম্পত্তি দখল করে বিক্রি থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ উঠেছে ।ইতিমধ্যে তাইজাল আলী খাঁন ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে ২৫টির মত অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে । অভিযোগ পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তে নেমেছে । এসব অভিযোগের বেশ কিছু বিষয়ে সত্যতাও পেয়েছে তদন্তকারী কমিটি ।তাইজাল আলী খাঁন শহর আওয়ামী লীগের টানা কয়েকবারের সভাপতি । বাসা শহরের মিল পাড়া । তিনি মিল পাড়ার যে বাড়িতে বসবাস করেন সেটিও মোহিনী মিল এর সম্পত্তি বলে জানা গেছে । তিনি মোহিনী মিলের জায়গা দখল করে বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে ।সম্প্রতি সময়ে কুষ্টিয়ায় জমি জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় । এরপর স্থানীয় সাংসদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেন । সেই কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন ও সদস্য পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত এবং সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী ।জমি জমা সংক্রান্ত যত অভিযোগ সেই কমিটির কাছে লিখিত আকারে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় । এরপর থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে কমিটির কাছে ।এরমধ্যে ৬৯ টি অভিযোগ আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে । এরমধ্যে শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি তাইজাল আলী খাঁন, তার ছেলে রনি, ভাতিজা আমজাদ আলী খান, মুসা আলি খান ও ভাগ্নে জিয়াউল হক জিয়ার বিরুদ্ধে দখলকৃত বিভিন্ন জমি জায়গা ও স্থাপনা সংক্রান্ত পঁচিশটি অভিযোগ জমা পড়েছে । যার অধিকাংশই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ।এসব স্থাপনা দখল করে দোকানপাট সহ নানা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে । এছাড়াও সড়কসহ হরিজনদের সম্পত্তি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ।অভিযোগের বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন ”জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ আসছে । ইতিমধ্যে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে । এর মধ্যে প্রভাবশালী নেতারা আছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে । এইসব বিষয়ে কমিটির সভায় আলোচনা করা হবে । এরপর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে । যে সকল ব্যক্তি সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি দখল করে ভোগ দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে । ইতিমধ্যে তদন্ত চলছে । পঁচিশটি অভিযোগের একটি নথী আমাদের হাতে এসেছে । লক্ষ্য করে দেখা গেছে মিল লাইন রেলগেট হতে হরিশংকরপুর রেলগেট পর্যন্ত রেললাইনের দুই ধারের জমি ও খাল দখল করে ভোগ করছে । “একইভাবে এশিয়ার এক সময়কার ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রকল লাহিনী মিলের সম্পত্তির বড় অংশ তাইজাল আলী খাঁন ও তার স্বজনদের দখলে । মোহিনী মিলের হাসপাতালে জমি দখল করে নেয়া হয়েছে । এর ক্লাবও তাইজাল গংদের দখলে চলে গেছে । লালন শাহ মাজারে যেতে ফুলতলা ব্রিজ এর ডানপাশে ব্রিজের জায়গা দখল করে দোকান তৈরি করা হয়েছে । এখানে বাচ্চু নামের একজনের জায়গা দখল করে নেয়ার মত অভিযোগ উঠছে আমজাদ আলী খানের বিরুদ্ধে । এমনকি মিল লাইন এলাকার বাসিন্দা রাসুলের মৃত্যুর পর ৬ থেকে ৭ টি দোকান দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তাইজাল আলীর স্বজনদের বিরুদ্ধে। ভাটাপাড়া এলাকার ইটভাটার জায়গা দখল করে পট্টি বানিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে তাইজাল আলী খানের বিরুদ্ধে ।স্থানীয়দের অভিযোগ মোহিনী মিলের জায়গা ভাড়া দিয়ে মোহিনী মিলের ম্যানেজার এর বাসস্থান দখল করে ভোগ করছেন তারা । মোহিনী মিল এর মাঝে অবস্থিত ট্রেনিং রুম ভেঙ্গে লোহার গেট বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি ও তার স্বজনরা।পৌরসভার কাউন্সিলর থাকাকালীন মোহিনী মিলের বড় লোহার তৈরি একটি গেট সেসময় বিক্রি করে দেন জনাব তাইজাল আলী । এমনকি মিলপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি দখল করে সেখানে পুকুর কেটে দখলে নেয়া হয়েছে ।তার ছেলে রনির বিরুদ্ধে আরো নানান অভিযোগ । মোহিনী মিল রেস্টহাউজ স্থানীয় পিরু ও নাসির এর মাধ্যমে দখল করে রেখেছেন তিনি । একইভাবে মিলের সাবেক গেস্টহাউস দখল ও টেনিস গ্রাউন্ড দখল করে ঈদগাহ তৈরি ও মিলের মাঠ দখল করে একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে ।অভিযোগপত্রে মিলপাড়া রেলওয়ে পুকুর দখল করে ভোগ দখল এর অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে । তাই জালালী খানের ছেলে রনির বিরুদ্ধে মোহিনী মিলে রেস্ট হাউজের ঘর দখল করে নানা রকম অপকর্ম করার পাশাপাশি এক নম্বর গেটের সামনের ফাঁকা জায়গা দখল করে ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।এছাড়াও আইজল আলী খানের ভাগ্নে আমজাদ আলীর বিরুদ্ধে দবির উদ্দিন
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা বলেন, মিলপাড়া এলাকায় তাইজাল আলী খাঁন তার ছেলে ও ভাতিজাদের ব্যাপক দাপট রয়েছে । ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না । এই কারণে চক্রটি নানা সময় জমি জায়গা দখল করে ভোগ করে আসছে । এভাবেই তারা অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন । মোহিনী মিলের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি এই চক্রের দখলে রয়েছে । তারা ভোগ দখল করে আসছে বিনা বাঁধায় ।এদিকে জেলায় এনআইডি জালিয়াতি করে জমি হাতি নেয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী । তারাও দখলকৃত জায়গা জমির বিষয়ে সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগী দের কাছে ক্ষমা চেয়েছে । এই সমস্ত জমি উদ্ধার করার বিষয়ে একটি কড়া পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী । যাদের জায়গা জমি তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ।অভিযোগের বিষয়ে তাইজাল আলী খাঁন বলেন তারা কি অভিযোগ দিয়েছে আমার জানা নেই । আমি কোনো অনিয়ম এর সাথে জড়িত নয়। আমার স্বজনরা কি করেছে সেটা তাদের ব্যাপার । নানা কারণে এখন বিভিন্ন অভিযোগ করা হচ্ছে । এতদিন কেন করা হয় নাই ।জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপরাধ এবং জমি দখলের মতো কাজ করলে তার কোন দায়ভার দল নেবে না । আমরাও চাই স্বচ্ছতার সাথে সবকিছু চলুক । এখানে কেউ সম্পত্তি দখল করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে তারা কড়া পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করি । দলো তাদেরকে সহযোগিতা করবে প্রয়োজনে।কমিটির একজন সদস্য বলেন তাইজাল আলী খাঁন, তার ছেলে রনি ও ভাতিজা শ্রমিকলীগ নেতা আমজাদ আলী খাঁনসহ তার ভাগ্নেদের বিরুদ্ধে ২৫ টির মতো অভিযোগ জমা পড়েছে ।এরমধ্যে মোহিনী মিল এর জমি দখলের অভিযোগে বেশি । এছাড়াও রেলের জমি ও পুকুর দখল থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের মতো অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে । এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে ।এদিকে সম্পত্তি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন অনেকের অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিটির সভায় এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে । সত্যতা পেলে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না ।
আমজাদ আলীর বিরুদ্ধে দবির উদ্দিন মোল্লা রেলগেট হয়ে গড়াই ব্রিজ পর্যন্ত রেলের জায়গা দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
মিল লাইনের শ্রমিক কোয়ার্টারের ঘর দখল করে নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। আরো নানা অভিযোগ সহ মোট ২৫ টি আলাদা আলাদা অভিযোগ জমা পড়েছে তাইজাল আলী খানসহ তার স্বজনদের বিরুদ্ধে ।