অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসিড সন্ত্রাসের মতো ধর্ষণ নামের পাশবিকতা নিয়ন্ত্রণেই তাঁর সরকার আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছে। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ একটা পাশবিকতা, মানুষ পশু হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের মেয়েরা আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সে জন্য আমরা এই আইনটি সংশোধন করে ধর্ষণ করলে যাবজ্জীবনের সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে কেবিনেটে সেই আইন পাস করেছি।’
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসিড নিক্ষেপকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কারণ সেখানে আমরা আইন সংশোধন করেছিলাম। এখন যেহেতু পার্লামেন্ট সেশনে নেই, তাই আমরা এ ক্ষেত্রে অধ্যাদেশ জারি করে দিচ্ছি। যেকোনো একটা সমস্যা দেখা দিলে সেটাকে মোকাবেলা করা এবং দূর করাই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
একের পর এক ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মধ্যে জরুরি বিবেচনায় গত সোমবারের বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানে সম্মতি দেয় মন্ত্রিসভা। রাষ্ট্রপতি সই করার পর গতকাল মঙ্গলবার এসংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মূল অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। এবার দিনটির মূল প্রতিপাদ্য ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সুশাসন, নিশ্চিত করবে টেকসই উন্নয়ন’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে ‘দৃষ্টান্ত স্থাপন’ করতে পেরেছে। তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টায় এমন দৃষ্টান্ত অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগে দেশে দুর্যোগ মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ১৯৯৬ সালে যতটুকু আমরা করে গিয়েছিলাম এর পরবর্তী সময়ে আবারও একই অবস্থা হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর থেকে আমি পদক্ষেপ নিয়েছি। তার ফলে আজকে আমরা যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সারা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, নদীভাঙন, খরার মতো দুর্যোগ প্রতিনিয়ত আসতেই থাকবে এবং সেগুলো মোকাবেলা করেই বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে। সেটা মোকাবেলা করে বাঁচতে হলে আমাদের কী করণীয়, আমাদের সেই কথাটা চিন্তা করে সব সময় পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা কিন্তু সেটাই করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করার আগে ভাবতে হবে, বাংলাদেশ ছোট একটি ভূখণ্ড, তাও আবার ব-দ্বীপ, বিশাল জনসংখ্যার বসবাস। দুর্যোগ মোকাবেলা করে মানুষকে রক্ষা করা, জান-মাল বাঁচানো, তাদের নিরাপদ রাখা এবং তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা অনেক বড় কাজ। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি।’
দুর্যোগ মোকাবেলায় সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিভাবে মানুষ নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে—এর ওপর আমাদের টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার এবং কিছু কিছু প্রদর্শনী দরকার। স্কুল থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের এই শিক্ষাটা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই শিক্ষাটা দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি এবং আমাদের নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান দুর্যোগ প্রতিরোধ ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের সক্ষমতা যে বেড়েছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানস্থলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন, নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। অন্যদিকে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।