স্টাফ রিপোর্টারঃ সাবিনাদের ঘর-বাড়ি, দোকান পাট গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সড়কের মাটির নিচে চাপা পড়েছে ভেঙ্গে দেওয়া ঘর। কেটে ফেলা হয়েছে ১২টি গাছ। আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় উনুন জ্বলছেনা। স্বামী সন্তান নিয়ে অনাহারে কাটছে তাদের দিন। সহায় সম্বল হারিয়ে সাবিনারা এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত মাসের ১৬ তারিখে হঠাৎ লোকবল নিয়ে এক্স-কেভেটর দিয়ে সাবিনার দুই কক্ষের টিনের ঘর, একটি দোকান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মজিদ আকন্দ সড়কের জমি দখলে নিতে সাবিনাদের ওপর ওই নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন। মজিদ আকন্দের হামলার শিকার শুধু যে সাবিনা একা হয়েছেন তা নয়। সাবিনার মতো আরো চারটি পরিবার এখন সর্বশান্ত হয়েছেন ওই হামলায়। আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত সাবিনা-শাহিনুররা। সাবিনাদের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জুনাইল ইউনিয়নের কুশমাইল গ্রামে।
ভুক্তভোগি সাবিনা, আনোয়ার, নাজিম, রমজান আলী ও নজরুল জানালেন- সড়কের পাশে নিজেদের জমিতেই ঘর-বাড়ি দোকান-পাট করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। সেই ঘর-বাড়ি দোকান-পাট ভেঙ্গে দেওয়া দিয়ে সরকারি সড়ক কেটে খাল বানিয়ে দখলে নিয়েছেন মজিদ আকন্দ। আর তাদের ব্যক্তি মালিকানা জমিতে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এব্যাপারে তারা নাটোরের আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, কুশমাইল গ্রামের ত্রিমোহনা নাছির মোড় থেকে সংগ্রামপুর, নাজিরপুরসহ অন্তত দশগ্রামের মানুষের যোগাযোগ রক্ষায় ষাটের দশকে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর স্থানীয় নাছির উদ্দিন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সড়কটিতে মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগী করেন। সেসময় তার নামেই ত্রিমোহনার মোড়ের নামকরণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, মজিদ আকন্দের চাচা প্রয়াত ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিনদের পৈতৃক ১১ শতাংশ সম্পত্তির ওপর দিয়েই সরকারি ওই সড়কটি বয়ে গেছে। এরপর সড়কটি হেরিংবন্ডও করা হয়। সাবেক ও হাল নকশাতেও সড়কটি আলাদা করে দাগ কেটে গেছে। ওই সড়ক বয়েই সংগ্রামপুর, নাজিরপুরসহ অন্তত দশ গ্রামের মানুষ চলাচলের পাশাপাশি তাদের জমিতে উৎপাদিত ফসল হাট-বাজারে নেওয়াসহ উপজেলা জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন।
নাছির মোড় হতে বয়ে যাওয়া ওই সড়কের বাম পাশজুড়ে ২শ ফিটের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে সাবিনার বাড়ি-মুদি দোকান, আনোয়ারের মুদি দোকান, নাজিমের সাইকেল গ্যারেজ, রমজান আলীর ফার্মেসি, নজরুল ইসলামের মুদি দোকান ছিল।
কিন্তু মজিদ আকন্দ সড়কের ওই ১১ শতাংশ জামি দখলে নিতে অনেক দিন ধরেই পক্রিয়া চালাচ্ছিলেন। সবশেষ গত মাসের ১৬ তারিখে হঠাৎ করেই এক্স-কেভেটর দিয়ে সড়কের বাম পাশের ওই ঘর-বাড়ি দোকান পাট ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। অস্ত্র হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ভয় দেখিয়েছেন মাজেদ, জহুর আলী, দিলবর, এন্তাজসহ মজিদ আকন্দের ১০জনের বাহিনী। একারণে মুখ খুলতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।
তবে মজিদ আকন্দ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের জমির ওপর দিয়ে সড়ক ছিল। তিনি ১১ শতাংশ জমি দখলে নিতে সড়কে বেড়া দিয়ে ছিলেন। একারণে স্থানীয়রা পাশ দিয়ে নতুন করে সড়ক নির্মাণ করেছেন।
জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন তবে ঘটনাস্থলে জাননি।
বড়াইগ্রামের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাইমেনা শারমিন বলেন, ভুক্তভোগিদের ঘর-বাড়ি দোকান সরকারি খাস জমিতে ছিল। উচ্ছেদের জন্য কেস নথিভুক্ত করে পাঠানো হয়েছে। এখনো নির্দেশনা আসেনি। কারা উচ্ছেদ করেছেন তিনি তা জানেন না। তবে সড়ক কোথায় ছিল, কোথায় আছে সেটাও তিনি জানেন না।