কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় দেওয়ানি মামলা অবমাননা করে সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় জমির প্রকৃত মালিকদের উল্টো ভূমিদস্যু সাজানোর চক্রান্ত করছে একটি পক্ষ।এই চক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম রাজা ও তার শশুর বিএনপি নেতা ইসলাম। সম্প্রতি এনআইডি কার্ড জালিয়াতি মামলার অন্যতম আসামী আশরাফুজ্জামান সুজনের সহযোগী এই রাজা। অভিযোগ রয়েছে ঐ জমিকে কেন্দ্র করে এর আগে আশরাফুজ্জামান সুজন কয়েক দফায় জমির প্রকৃত মালিকদের সাথে বৈঠকে বসে। সে সময় তারা তাদেরকে নাম মাত্র দামে জমি বিক্রয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্ত মালিক পক্ষ রাজি না হওয়ায় তাদেরকে হুমকি ধামকি অব্যাহত রাখে রাজা ও তার সহযোগীরা। শেষমেষ দিশা না পেয়ে ঘোলা মানিতে মাছ শিকারের কুট কৌশল আটে রাজা ও তার শশুর ইসলাম। সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করে অন্যর সম্পতি বিক্রির অভিযোগে আশরাফুজ্জামান সুজন ও তার সহযোগিরা ধরা পড়লে সেই সুযোগকে কাজে লাগানোর নীল নকশা আঁকতে থাকে চক্রটি।এরই অংশ হিসেবে জমির প্রকৃত মালিকের নাতি ছেলে শহরের বড় বাজারের বিশিষ্ট চাউল ব্যবসায়ী খোন্দঃ শওকত আলী টন এবং জমির ভাড়াটিয়া তহিদুল ইসলাম(পিয়াস) এর নামে থানায় চাঁদাবাজি ও সম্পত্তি দখলের নামমাত্র অভিযোগ করে তা মিডিয়ায় প্রচার করে। সুত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় বাহাদুর খালী মৌজায় এস,এ ৬৯৫ নং খতিয়ানের আর,এস ৬২৮ নং খতিয়ানের ১০৫০ নং দাগের ০.০৬৫০ একর সম্পত্তি বাংলা ১৩৫৯ সাল/ইং ১৯৬৬ সালে পূর্ব মালিক শ্রী শ্যাম লাল সুরেখা এবং শ্রী মতিলাল সুরেখা।তাদের নিকট থেকে খোন্দকার আজাহার আলী নামে এক ব্যাক্তি বন্দোবস্ত মূলে জমিটি খরিদ করে। জমি ক্রয়ের পর খোন্দকার আজাহার আলী ১৯৭৫/৭৬ সালে মিস কেস (৬৯ ঢ১১১-১৪৩/৭৫-৭৬)এর মাধ্যমে এস এ ১০৩৫/০৩ খতিয়ানে ৬৯৫ দাগে ১ অংশ ০.০৬৫০ একর জমি নিজ নামে খারিজ করে নেই। তিনি ১৯৭৮ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভা থেকে প্লান পাশ করে ঐ জমিতে কাঁচা পাকা ঘর নির্মাণ করে আব্দুর রহমানের নিকট পজিশন বিক্রয় করে নিয়মিত মাসিক ভাড়া আদায় করতে থাকে। এছাড়া মোঃ লিটন, তহিদুল ইসলাম(পিয়াস) ও আব্দুল ওহাবের নিকট ঘর ও ফাঁকা জায়গা ভাড়া দেয়।খোন্দকার আজাহার আলীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগণ নিয়মিতভাবে সেই জায়গার ভাড়া উত্তোলন করছে। সূত্র আরো জানায়, ১৯৮০ সালে একই জমিতে মহাসীন আলী ও কাশেম আলী খান নামে দুই ব্যাক্তি শ্রী শ্যামলাল সুরেখা এবং শ্রী মতিলাল সুরেখার স্বাক্ষর জাল করে জালিয়াতি বায়নানামা তৈরি করে।পরবর্তীতে তারা সাব জজ আদালত থেকে ৪ মাসের মধ্যে একতরফা রায় তৈরি করে জমি দখল নিতে আসে। সে সময় জমির মালিক খোন্দকার আজাহার আলী দখলে বাঁধা দেয়। তিনি বাদী হয়ে কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করে যার নং-৩১/৮০। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। এছাড়া বাদী খন্দকার আজাহার আলী অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে ৬/৮৩ নং মামলায় ইনজাংশন জারি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে এবং সমস্ত প্রমান সাপেক্ষে উক্ত মামলার রায় খন্দকার আজাহার আলীর পক্ষে ঘোষনা দেয় বিচারক। রায়ে ৭ নং বিবাদী মহাসিন আলী এবং ৮ নং বিবাদী কাশেম আলীকে জমির উপর আসার নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।আদালতের রায়কে অবমাননা করে ২০১৭ সালে মহাসীন আলীর মেয়ে মাছাঃ মিরানা ইয়াসমিন ঐ জমি গোপনে সাইফুল ইসলাম রাজা নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করে দেয়। যা মাগুরা জেলায় কমিশন রেজিষ্ট্রি হয়।রেজিষ্ট্রি হওয়ার পর মহাসীন আলী ব্যাপারটি জানার পর দলিল বাতিলের জন্য কুষ্টিয়া সাব জজ-১ আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করে। যার নং- ৮২/২০১৭ এবং মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে। সুত্র আরো জানায়, এ ঘটনার পর সে সময় কুষ্টিয়ার এনআইডি কার্ড জালিয়াতি মামলার অন্যতম আসামী ভূমিদস্যু আশরাফুজ্জামান সুজনের সাথে সাইফুল ইসলাম রাজার সখ্যতা ছিল। সেই সুত্রে ২০১৭ সালে রাজা, তার পিতা নান্নু মন্ডল ,শশুর বিএনপি নেতা ইসলাম উদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান সুজন জমির দখল নিতে আসে।এ ঘটনায় মৃত খন্দকার আজাহার আলীর ওয়ারেশগণ কুষ্টিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারা মামলা করলে তার পক্ষে ম্যাজিষ্ট্রেট রায় ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় জমির প্রকৃত মালিকের নাতি ছেলে শওকত আলী টন ও ভাড়াটিয়া তৌহিদুল ইসলাম পিয়াস বলেন, জমি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে একটি চক্র। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের হুমকী ধামকী দিতে থাকে। কয়েক দফায় বৈঠকও হয়। বৈঠকে আশরাফুজ্জামান সুজন ও হাজি মফিজুল ইসলাম আমাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। সে সময় ২০ লক্ষ টাকার অফার দিয়েছিল তারা। আমরা রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদেরকে হয়রানি করে।তারা আরো বলেন,মোট জমির প্রকৃত মূল্যে প্রায় চার কোটি টাকা। তাদের মূল উদ্দেশ্যে ছিল আমাদেরকে নামমাত্র অর্থ দিয়ে জমিটি তারা দখলে নিয়ে বিক্রি করবে। এটি একটি চক্র। পরে তাদের মিশনে সাকসেস না হতে পেরে সাইফুল ইসলাম রাজা ছয়-সাত মাস আগে মডেল থানায় আমাদের নামে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের নাম মাত্র অভিযোগ করে।পরবর্তীতে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে এর কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি।এ ব্যাপারে জানতে সাইফুল ইসলাম রাজার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি