আমি যখন কলেজে বা ইউনিভার্সিটির প্রথম দিকে তখন বিটিভিতে একটা কার্টুন সিরিজ চলতো। আমি খুব দেখতাম। কার্টুনের চরিত্রগুলো কখনো কখনো মারামারি করে মাথা কেটে ফেলতো তারপর মাথার পরিবর্তে মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেত থেকে একটা ছিঁড়ে নিয়ে কাটা ধড়ের উপর বসিয়ে ঠিকই মাথার কাজ চালিয়ে নিতো। গত কয়েকদিন ধরে কার্টুনটার কথা খুব মনে পড়ছে!
নিজেদের আড্ডায় আমি প্রায়ই বলি; এত এত সব উদ্ভট আইডিয়া কার মাথা থেকে আসে? অতিউৎসাহী একটা গ্রুপ আসলে কার লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে? আমি কোনোভাবেই মানতে রাজি নই এরা সরকারের লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে। বরং এদের প্রতিটা কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত সরকারকে বিব্রত করছে। গত ২১ তারিখে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুকে যখন গ্রেফতার করা হয় আমি তখন আমার কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে চা খাচ্ছিলাম। মিনিট সাতেকের মধ্যেই ডিবি অফিসে নুরু পৌঁছে গেলো। আমি অফিসে ফোনে নিউজটা দিচ্ছিলাম। ফোন শেষ না করতেই দেখি বড় ভাই তড়িঘড়ি করে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। কারণ উনাকে তখনই ঢাকা মেডিকেলে যেতে হবে। তারপর আমার চোখের সামনে দিয়েই ভিআইপি প্রটোকল দিয়ে নুরুকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি চা শেষ করে গাড়িতে উঠতে না উঠতেই আমার অফিস থেকে জানানো হলো নুরুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে আমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। আশেপাশের প্রভাবশালী অনেককে জিজ্ঞেসও করেছি। কিন্তু উত্তর মেলেনি। প্রশ্নটা হলো, নুরুকে কেন গ্রেফতার করা হলো? ১০ মিনিটের মধ্যে কি এমন ওহী নাজিল হলো যাতে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া নুরু দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হয়ে গেলো! এসব করে কি প্রমাণ করা হলো! এদেশে এই নুরুই একদিন মন্ত্রী হবে। লক্ষণ কিন্তু তাই বলে। রাজনৈতিক দৈন্যতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? নুরুকে রীতিমত জোর করে বিরোধীদলের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। খালেদা-তারেক বাদে গোটা দেশকে আওয়ামী লীগ বানানোর উদ্ভট আইডিয়া যাদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এসেছে তারা কতটা ভুগবে জানি না। তবে এইটুকুই জানি গোটা দেশকে একদিন এই ভুলের কড়া মাশুল দিতে হবে।
অর্থের অভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম শাকিলের জীবন বাঁচানো যায়নি। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী শাকিল ছাত্রলীগের নেতা ও জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। জানা গেছে, হার্ট ও মস্তিষ্কের জটিলতায় ভুগছিলেন শাকিল। অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর মিলেনিয়াম হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শাকিলের বন্ধু ঢাবি শিক্ষার্থী নাইম জানান, শাকিলের বাড়ি পাবনা। তার চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই শাকিলকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছিলাম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার, বিভাগের চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সবাইকে শাকিলের বিষয়ে অবহিত করেছিলাম। তবে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সেভাবে কোনো অনুদান পাইনি।
বিবার্তা’র ৯ সেপ্টেম্বরের নিউজের শিরোনাম ছিল ‘বাঁচতে চায় ঢাবি ছাত্র শাকিল’। শাকিল বাঁচেনি। গতকাল দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে। গত সন্ধ্যা থেকে আমি একজনকে ভীষণ মিস করছি। মাহবুবুল হক শাকিল; আমাদের শাকিল ভাই। আহম্মেদ শরীফ ৩০ লাখ টাকা অনুদান পায় কিন্তু শাকিলের কথা আপার কান পর্যন্ত কেউ পৌঁছে দেয় না। ছাত্রলীগ নেতা, একটা হলের নির্বাচিত ভিপি মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য মরে যায়! টাকা না থাকায় শাকিলকে বের করে দেয় স্কয়ার হাসপাতাল। পরে ঢাকা মেডিকেলে ধুঁকে ধুঁকে মরে শাকিল। আওয়ামী কর্মীদের কান্না তাদের প্রিয় আপার কান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কেউ নেই। তাদের হয়ে কথা বলার মতন একটা লোকও নেই আপার পাশে!
মানুষের মন ভালো নেই। সর্বত্রই কেমন জানি মিছে চাকচিক্য আর শুভঙ্করের ফাঁকি। বড় বড় অট্টালিকা, ব্রিজ, কালভার্ট, ফ্লাইওভারের চেয়ে বেশি জরুরি মানুষের মনের ক্ষত সারানো। দিনশেষে মানুষ একবেলা খাবার কম খেয়ে হলেও সুখ আর স্বস্তি চায়। গোটা জাতি যে ভয়ংকর রকমের মনের অসুখে ভুগছে; কোন ওষুধে নিরাময় হবে সেটা?
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এদেশের মাটি আর মানুষের প্রতিটা অর্জনের সাথে মিশে আছে এই সংগঠনটি। দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। ত্যাগী এবং পরীক্ষিত কর্মীদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে দলের। এটা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোন লিমিটেড কোম্পানি বা সোশ্যাল ক্লাব নয়। লাখো কর্মীর আবেগ আর রক্তের অপর নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তবে বর্তমানের এই আওয়ামী লীগ বড্ড অচেনা!
<