অনলাইন ডেস্কঃ
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। থানা-ওয়ার্ডের কমিটিগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ। একই অবস্থা প্রায় সব সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রেও। মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ প্রায় সব সহযোগী সংগঠনের কমিটির মেয়াদ নেই। উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ চার পদের আবার তিনটিই চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে।
সম্মেলন হলেও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নেই। ফলে ‘সাংগঠনিকভাবে দুর্বল’ ঢাকা নিয়ে এখন চিন্তিত আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণ। ঢাকায় সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল থাকলে সারা দেশে সবল থেকে লাভ নেই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, অনেক জায়গায় সম্মেলন হলেও কোভিডের কারণে কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। এখন সেগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হবে। ঢাকার সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা অনেক বড় জায়গা। এখানে কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকতেই পারে। তিনি বলেন, ঢাকা আর ফরিদপুরকে এক করে মিলালে তো হবে না। ঢাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হবে।
২৬ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ঢাকার সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, সারা দেশের সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। বিশেষ করে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের অবস্থা করুণ। যেকোনো জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্রলীগকে বর্ধিত সভা করা লাগে। অনেক জেলা থেকে সাংগঠনিকভাবে ঢাকা মহানগরী অনেক পিছিয়ে আছে। ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণ। ঢাকা শহরে আমরা দুর্বল হলে সারা বাংলাদেশে সবল থেকেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পাব না।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সে কাজও শুরু করেছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সম্মেলন হওয়া কমিটিগুলো চলতি মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ করতে চায় দলটি। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিটি কমিটির খসড়া তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নগর কমিটির পর থানা ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করবেন তারা। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর ও এর অন্তর্গত সহযোগী সংগঠনগুলোকেও চাঙা করতে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। সম্মেলন হওয়া সহযোগী সংগঠনের নগর কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার কাজও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোর সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান শুক্রবার বিকালে বলেন, আমরা একটি তালিকা ইতোমধ্যে জমা দিয়েছি। নগর কমিটি হওয়ার পর আমরা থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো ঢেলে সাজাব। আমরা ঘরে বসে কমিটি দিতে চাই না। চেষ্টা করব সংশ্লিষ্ট থানা-ওয়ার্ডে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রোগ্রাম করে কমিটি দিতে।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল বলেন, আমরা ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনের কথা ভাবছি। করোনাভাইরাসের কারণে এতদিন এটা কঠিন ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সম্মেলন করে দেব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের (১৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যে তালিকা জমা দিতে পারব। এ কমিটি ঘোষণা হলে আমরা নগরের থানা-ওয়ার্ডের দিকে নজর দেব। সেখানে বেশ কিছু কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ আছে। পর্যায়ক্রমে সম্মেলনের মাধ্যমে সেগুলো ঢেলে সাজানো হবে।
জানা গেছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে আগে-পরে মিলিয়ে (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) প্রায় ৩০টি সম্মেলন হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে ছয় জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া খুলনা বিভাগের ১১টি জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে সাতটি জেলা ও এক মহানগর কমিটি; রংপুর বিভাগে ৯টি জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে ছয়টির; বরিশাল বিভাগে সাত জেলা ও মহানগরের মধ্যে তিনটি; রাজশাহী বিভাগে ৯ জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে দুটি; সিলেট বিভাগের পাঁচ জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে তিনটির সম্মেলন হয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি জেলা ও মহানগর কমিটির একটিরও সম্মেলন হয়নি। এ সময়ে ঢাকা বিভাগের ১৭ জেলা ও মহানগরের মধ্যে মাত্র দুটির সম্মেলন হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন সম্মেলনও বাকি রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের অন্যসব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত সম্মেলন করার চিন্তাভাবনা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ইতোমধ্যে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন তারা।