ধর্মসাগর, নামে সাগর হলেও এটি কুমিল্লা নগরীর একটি প্রাচীন দিঘি। এটিকে নগরীর ফুসফুসও বলা হয়। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধর্মসাগরের আয়তন ২৩.১৮ একর।
ত্রিপুরার রাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে দিঘিটি খনন করেন। কুমিল্লার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ধর্ম সাগরের প্রায় পৌনে ছয়শ বছরের ইতিহাস। নগরীর কর্মময় জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ একটু স্বস্তির জন্য এখানে ছুটে আসেন। স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন সকালে ও সন্ধ্যায় ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ে হেঁটে বেড়ান নির্মল বায়ুর প্রত্যাশায়। এখানে এলে নাগরিক জীবনের যাবতীয় ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এটির পূর্বে কুমিল্লা স্টেডিয়াম ও কুমিল্লা জিলা স্কুল, উত্তরে নগর উদ্যান ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। উত্তর কোণে রানীর কুঠির। পশ্চিম পাড়ে বসার ব্যবস্থা আছে। স্থানীয়রা ছাড়া অন্য জেলার লোকজনও দিঘিটি দেখতে আসেন। দিঘিরপাড়ের বড় বড় গাছের সারি ধর্মসাগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। কান পাতলে শোনা যায় পাখির কলরব। উত্তর পাড়ে দাঁড়ালে দিঘির পানি ছুঁয়ে আসার ¯িœগ্ধ বাতাস দেহমনে ভালো লাগা দোলা দিয়ে যায়। রাজমালা গ্রন্থ আনুসারে, ধর্মমাণিক্যের ৩২ বছর রাজত্ব করেন (১৪৩১-৬২ খ্রি.)। ধর্মসাগর উৎসর্গের সময় যে তাম্রলিপি প্রদান করা হয় তাতে বলা হয়, ‘চন্দ্র বংশোদ্ভব মহামাণিক্যের সুধীপুত্র শশধর সদৃশ শ্রী শ্রী ধর্ম মাণিক্য ১৩৮০ মেষ সংক্রমণে (চৈত্র মাসের শেষ তারিখে) সোমবার শুক্ল ত্রয়োদশী তিথিতে কৌতুকাদি তাষ্ট বিপ্রকে শস্য-সমন্বিত ফল ও বৃক্ষাদি পূর্ণ ঊনত্রিশ দ্রোণ ভূমি দান করিলেন। আমার বংশ বিলুপ্ত হইলে যদি এই রাজ্য অন্য কোনো ভূপতির হস্তগত হয়। তিনি এই ব্রহ্মবৃত্তি লোপ না করিলে আমি তাহার দাসানুদাস হইব।’ দিঘির সংরক্ষণে ভূমিকা রাখলে রাজা কৃতজ্ঞ থাকার কথা এখানে বলেছেন। গবেষক আহসানুল কবির বলেন, সমতটের রাজধানী বলা হয় কুমিল্লাকে। তবে সেটা শহর কুমিল্লা নয়। জেলার চান্দিনাসহ আশপাশের অঞ্চলে ছিল সেই রাজধানী। শহর কুমিল্লা সমতট অঞ্চলের নতুন জনপদ। শহর কুমিল্লায় মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে এই অঞ্চলের মানুষের পানির কষ্ট দূর করতে দিঘিটি খনন করেন। দিঘির আকার দেখে মনে হয় পৌনে ছয়শ বছর আগেও এখানে অনেক মানুষের বসবাস ছিল। প্রবীণ সাংবাদিক খায়রুল আহসান মানিক বলেন, লোকজন ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ে হাঁটতে আসেন। দিঘির চারদিকে হাঁটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া পানিতে ময়লা ফেলা ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে নজরদারি প্রয়োজন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল সাক্কু বলেন, নগরীর সৌন্দর্য বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ধর্মসাগর দিঘির চারদিকে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।