কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:-
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতর কারনে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। যে কোন মুল্যে ভিসির চেয়ার ধরে রাখতে নানা নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন তিনি।
গতবারের মত এবারো টাকার বস্তা নিয়ে মাঠে নেমেছে তার অনুসারীরা। বিশেষ করে সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা তাদের চামড়া বাঁচাতে আসকারীকে ভিসি পদে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হলে অন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে পারে। আর এই অসন্তোষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যায় অচল হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে নানা অনিয়ম দুর্নীতি আর সেচ্ছাচারিতার বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীর নজরেও এসেছে। আসকারির আমলনামা শিক্ষামন্ত্রীর টেবিলে গেছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ১২ তম ভিসি হিসেবে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ পান প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী এবং ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ পান প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা।
ড. আসকারী সেদিন যোগদান করলেও, ২১ আগস্ট শোকাবহ গ্রেনেড হামলা দিবস হওয়ায় ড. সেলিম তোহা সেদিন যোগদান না করে ২২ আগস্ট ট্রেজারার হিসেবে যোগদান করেন। সেই মোতাবেক আজ ২০ আগস্ট ভিসির এবং ২১ আগস্ট ট্রেজারারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে দুটি পদের মেয়াদ শেষ হলেও সকলের দৃষ্টি ভিসির দিকে। কে হচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তি ভিসি। এনিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে নানা মহলে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে আজ ২০ আগস্ট ভিসি নিয়োগের বিষয়ে যদি কোন সুরাহ না হয় তাহলে প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান সাময়িক ভাবে ভিসির দায়িত্ব পেতে পারেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ অনুমোদিত ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিপরীতে তাঁর অনুসারি শিক্ষকদের নিয়ে স্ব-ঘোষিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন, নির্বাচিত কর্মকর্তা সমিতির বিপরীতে তাঁর অনুসারি কিছু কর্মকর্তাদের নিয়ে অফিসার্স এসোসিয়েশন এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ কর্মকর্তা ইউনিট গঠন, কর্মচারী সমিতিকে বিভক্ত করে টেকনিক্যাল কর্মচারী সমিতি গঠন, ইবি প্রেস ক্লাব এবং সাংবাদিক সমিতি থাকলেও তাঁর অনুসারি কিছু শিক্ষার্থীদের দিয়ে ইবি রিপোটার্স ইউনিটি গঠন, ইবি ছাত্রলীগের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ৪০ লক্ষ টাকার বিনিয়ের কেন্দ্র থেকে তাঁর এলাকার ছেলে রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি এবং তাঁর অনুগত রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কমিটি করে নিয়ে আসা, নিজের অনুগত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অপরাধ প্রমাণিত হলেও শাস্তির ব্যবস্থা না করা এবং একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে নেপথ্যে থেকে সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ ও টেন্ডার বানিজ্য, মেগ প্রকল্পের দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ থাকায় ড. আসকারী প্রগতিশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের কাছে কোনঠাসা হয়ে পরেছেন।
আর এ সকল অভিযোগ দেশের বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকায় এবং টিভি চ্যানেলে গুরুত্বের সাথে প্রচারও প্রকাশ হওয়ায় তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিকট আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।
অপর সূত্র জানায়, যে কোন মুল্যে ভিসি হতেই হবে এমন চেষ্টা করে চলেছেন ড. আসকারী। আর একাজে তিনি এবার রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে আমলাদের সাথে বেশি যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছেন। শোনা যাচ্ছে তিনি অর্থের বিনিময়ে হলেও ভিসি নামক এই সোনার হরিণটি চান। কারণ তিনি আবারও ভিসি হতে না পারলে তাঁর সকল অপকর্ম প্রমাণিত হবে এবং বড় ধরণের বিপদের সন্মুখীন হতে হবে তাঁকে।
ইতোমধ্যে তার অনুসারিরা বিভিন্ন আমলাদের সাথে যোগাযোগ করে অর্থের লেনদেন শুরু করেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। ২০১৬ সালে ও তিনি অর্থের বিনিময়ে ভিসি হয়েছেন এমন কথাও ক্যাম্পাসে প্রচলিত আছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ড. আসকারী দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এ খবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথেই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করেছেন ড. আসকারী বিরোধীরা। তারা ইতোমধ্যে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড পর্যন্ত তৈরী করেছে। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেলেই প্রগতিশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলবে বড় ধরনের আন্দোলন এমনটিও শোনা যাচ্ছে।
করোনার কারনে ক্যাম্পাস বন্ধ না থাকলে অনেক আগেই ভিসির সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হতো। আর সেই আন্দোলনের মুখে এতদিন তাকে অবশ্যয় চলে যেতে হতো। তারা ড. আসকারীকে নয়, প্রকৃত মুজিব আদর্শের যে কোন ব্যক্তিকে ভিসি হিসেবে আমরা দেখতে চান।
তারা বলেন, ভিসি আসকারী একজন ছদ্মবেশী মানুষ। তিনি মহা দুর্নীতিবাজ। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ হিসেবে নিজেকে জাহির করলেও বাস্তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল সকল সংগঠনের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে সংগঠনগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি তিনি সুকৌশলে জামায়াত ও বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন। এমন মানুষকে আমরা আর ভিসি হিসেবে দেখতে চাই না।