সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি :
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ট্র্যাজেডির পর রাসায়নিক গুদাম সরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় সরকার ।
তারই ধারাবাহিকতায় ৩০ এপ্রিল,২০১৯ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে কেরানীগঞ্জের পরিবর্তে বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রকল্পের আওতায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে সকল কেমিক্যাল গোডাউন স্থাপন করা হবে মর্মে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরান ঢাকাকে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কেমিক্যাল পল্লী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৪টি কেমিক্যাল গুদাম স্থাপনে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে খরচ হবে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা-নবাবগঞ্জ-দোহার মহাসড়কের পাশ ঘেষে তুলশিখালী ব্রিজ সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের চিত্রকোট, গোয়ালখালী, কামারকান্দা মৌজায় ৩০৮.৩৩ একর জমিতে ২ হাজার ১৫৪টি প্লট তৈরি হবে। একই সঙ্গে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করা হবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
স্বপ্ন বাস্তবায়ন হল আজ। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ ও দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে সিরাজদিখানে সরকারি প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের বাড়ি গিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে বুধবার বিকাল ৩টায় উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের গোয়ালখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে বিসিক ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক জন্য অধিগ্রহণ করা ৪৫ জন ভূমির মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার নিজে এ চেক হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন াতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: সাইফুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফিকুন নাহার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো: ফজলুল হক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান নাহিদ ও চিত্রকোট ইউপি চেয়ারম্যানসহ ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকগণ।
বাড়িতে বসে ভূমি অধিগ্রহণের চেক পেয়ে খুশি ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকগণ। মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন বলেন, জমির টাকা পেতে আমাদের অনেক ঘুরতে হতো। ডিসি অফিসে গনশুনানিতে অংশ নিতে হতো। অনেক কাজ নিজেরা বুঝতে পারতাম না। বাধ্য হয়ে দালালদের শরণাপন্ন হতে হতো। জমি অধিগগ্রণের ফলে পাওয়া টাকার একটি বড় অংশ ঘুষ দিতে চলে যেত। এদিকে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে নগদ অর্থের সংকটে ছিলাম। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িতে এসে অধিগ্রহণের চেক দিলেন। এ সময়ে এই চেক পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা হয়রানি থেকে বাঁচবেন।
এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের সময় ও অর্থ বাঁচাতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক দিচ্ছি। এখন থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের বাড়িতে গিয়েই ক্ষতিপূরণের চেক দিচ্ছি।