অনলাইন ডেস্কঃ
৪০ বছর বয়স হচ্ছে মানুষের পূর্ণতা ও পরিপক্বতার বয়স। নবীরা এই বয়সেই ওহি লাভ করে থাকেন। রাসুল (সা.)-এর বয়স ৪০ হওয়ার পর তাঁর জীবনের দিগন্তে নবুয়তের নিদর্শন চমকাতে লাগল। এই নিদর্শন প্রকাশ পাচ্ছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। এ সময় তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন সে স্বপ্ন শুভ্র সকালের মতো প্রকাশ পেত। এ অবস্থায় ছয় মাস কেটে গেল। এ সময়টুকু নবুয়তের সময়ের ৪৬তম অংশ এবং নবুয়তের মোট মেয়াদ ২৩ বছর। প্রথম ওহি হিসেবে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম পবিত্র কোরআনের সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নিয়ে আসেন।
ইতিহাসের বিভিন্ন সূত্র ও বিভিন্ন গ্রন্থ অধ্যয়ন করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ওহি এসেছিল রমজান মাসের ২১ তারিখ সোমবার রাতে। চান্দ্র মাসের হিসাব মোতাবেক সে সময় মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স ছিল ৪০ বছর ছয় মাস ১২ দিন।
ওহির সূচনা প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.) বলেন, প্রিয় নবীর ওপর ওহি নাজিলের সূচনা স্বপ্নের মাধ্যমে হয়েছিল। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, সে স্বপ্ন শুভ্র সকালের মতো প্রকাশ পেত। এরপর তিনি নির্জনতাপ্রিয় হয়ে যান। তিনি হেরা গুহায় ইবাদত বন্দেগিতে কাটাতে থাকেন এবং এ সময় একাধারে কয়েক দিন ঘরে ফিরতেন না। পানাহার সামগ্রী শেষ হয়ে গেলে সেসব নেওয়ার জন্য বাড়িতে ফিরতেন। এভাবে একপর্যায়ে জিবরাঈল (আ.) তাঁর কাছে আসেন এবং তাঁকে বলেন, পড়ো। তিন বলেন, আমি পড়তে জানি না। ফেরেশতা তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে চাপ দিলেন, পড়ো। তিনি বলেন, আমার সব শক্তি যেন নিংড়ে নেওয়া হলো। এরপর ফেরেশতা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে বলেন, পড়ো। তিনি বলেন, আমি তো পড়তে জানি না। আবার ফেরেশতা তাঁকে বুকে জড়িয়ে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বলেন, পড়ো, তৃতীয়বার তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে চাপ দিলেন এবং বলেন, পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
এই আয়াতগুলো নাজিল হওয়ার পর প্রিয় নবী (সা.) ঘরে ফিরে এলেন। তাঁর বুক ধুকধুক করছিল। স্ত্রী খাদিজা (রা.)-কে বলেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। খাদিজা (রা.) নবীকে চাদর জড়িয়ে শুইয়ে দেন। তাঁর ভয় কেটে গেল।
এরপর খাদিজা (রা.)-কে সব কথা খুলে বলে রাসুল (সা.) বলেন, আমার কী হয়েছে? আমি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। খাদিজা (রা.) তাঁকে অভয় দিয়ে বলেন, আল্লাহ আপনাকে অপমান করবেন না। আপনি আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করেন, বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করেন, মেহমানদারি করেন, সত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। খাদিজা (রা.) এরপর প্রিয় নবী (রা.)-কে নিজের চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে নিয়ে গেলেন। ওয়ারাকা ইবনে নওফেল জাহেলি যুগে খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি হিব্রু ভাষায় লিখতে জানতেন। সে সময় তিনি ছিলেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও দৃষ্টিহীন। খাদিজা (রা.) বলেন, ভাইজান, আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ওয়ারাকা বলেন, ভাতিজা তুমি কী দেখেছ?
রাসুল (সা.) যা যা দেখেছেন সব তাঁকে খুলে বলেন। সব শুনে ওয়ারাকা বলেন, তিনি সেই দূত, যিনি মুসা (আ.)-এর কাছে এসেছিলেন। হায়! যদি আমি সেই সময় বেঁচে থাকতাম, যখন তোমার জাতি তোমাকে বের করে দেবে। রাসুল (রা.) অবাক হয়ে বলেন, আমার জাতি আমাকে সত্যি সত্যিই বের করে দেবে? ওয়ারাকা বলেন, হ্যাঁ, তুমি যে ধরনের বাণী লাভ করেছ, এ ধরনের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে তার সঙ্গে শত্রুতা করা হয়েছে। যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। এর কিছুকাল পরই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। এরপর হঠাৎ ওহির আগমন বন্ধ হয়ে যায়। (বুখারি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২-৩)