অনলাইন ডেস্ক:
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মামলা (ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল) হাইকোর্টে শুনানির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই মধ্যে পলাতক আসামিদের পক্ষে সরকারি খরচে আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। কবে নাগাদ এই বেঞ্চ নির্ধারিত হবে তার পুরো এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির। বেঞ্চ নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন দেবে। এ মাসেই এই আবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার ভার্চুয়ালি শুনানি হবে নাকি আইনজীবীদের শারীরিক উপস্থিতিতে শুনানি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধান বিচারপতির ওপর। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ীই বিচারকাজ পরিচালিত হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত। এখন একটি বেঞ্চ গঠন করে দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাব। তিনি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এ বছরই হাইকোর্টে মামলাটির বিচার সম্পন্ন করার প্রয়াস থাকবে আমাদের।’ সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট শাখা মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করছে। প্রস্তুত হলেই প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই বিভিন্ন মামলার শুনানি চলছে। তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এখানে অনেক আসামি। অনেক আইনজীবী যুক্ত। তাই এই মামলা ভার্চুয়ালি শুনানি কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে তা নিয়েই প্রশ্ন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক সরকারি ছাপাখানায় (বিজি প্রেস) তৈরির পর গত বছর ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। দুটি মামলায় প্রায় ২২ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক হাতে পাওয়ার পর মামলাটি (ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল) হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট শাখা। জানা গেছে, পেপারবুক তৈরির সময় কোনো নথি বা তথ্য বাদ পড়েছে কি না তা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগের প্রয়োজন আছে কি না তা খতিয়ে দেখার পর পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলেই শুনানি শুরু হতে পারে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একটি হত্যা, অপরটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে। এরপর বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ঘটনার সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি মামলায় তাঁদের অভিন্ন সাজা দেওয়া হয়েছে। এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। এরপর কারাবন্দি আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ অবস্থায় বিজি প্রেসে পেপারবুক প্রস্তুত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়।
হত্যা মামলায় ১৪ জঙ্গিসহ ১৯ জনকে ফাঁসির দণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসি এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ৩৮ জনকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের অন্য ধারায় ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই মামলায় আলাদাভাবে সাজা দেওয়া হলেও তা একযোগে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত ৪৯ আসামির মধ্যে ১৮ জন পলাতক। পলাতকদের মধ্যে দুইজন ফাঁসির আসামি, ১২ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আর অন্যান্য মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি রয়েছেন।