নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাম গ্রামের দাওয়াতুল ঈমান মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা নওমুসলিম ওমর ফারুক গত ৩ অক্টোবর নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ গাউছিয়া মার্কেট এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ১৫ দিনেও কোন সন্ধান মিলেনি। নিখোঁজের পর ওমর ফারুকের মা শান্তি রানী বিশ্বাস বাদী হয়ে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। এঘটনায় নিখোঁজ ওমর ফারুকের পরিবার ও এলাকাবাসী মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার দৌলখাঁড় ইউনিয়নের বাম গ্রামের দাওয়াতুল ঈমান মাদরাসা মাঠে মানববন্ধন ও পরে সংবাদ সম্মেলন করে।
নিখোঁজ ওমর ফারুকের পারিবারিক সূত্র জানায়, নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পূর্ব কালাদী গ্রামের শ্রী মন্টু বিশ্বাসের ছেলে উজ্জ্বল বিশ্বাস ২০১৫ সালে আদালতে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজ নাম রাখেন মোহাম্মদ ওমর ফারুক। পরে তিনি তার পিতা শ্রী মন্টু বিশ্বাসকে ইসলাম ধর্মে আহবান করলে তিনিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজ নাম রাখেন আবু বকর সিদ্দিক। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর ঢাকায় চাকুরীর সুবাধে ওমর ফারুকের সাথে পরিচয় হয় বাম গ্রামের নিজাম উদ্দিনের সাথে। নিজামের সাথে পরিচয় সূত্রে ওমর ফারুক বিয়ে করেন নিজামের ভাগ্নি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁড় ইউনিয়নের বাম গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে শারমিন আক্তার লিমাকে। লিমাকে বিয়ে করে তিনি শ্বশুর বাড়ীর পাশে জমি ক্রয় করে দাওয়াতুল ঈমান নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে নওমুসলিম ওমর ফারুক তার পিতা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ওই গ্রামের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছে।
গত ৩ অক্টোবর সোমবার সকালে নওমুসলিম ওমর ফারুক বাম গ্রামের ওমর আলীর ছেলে তানভির হোসেন তানুকে সাথে নিয়ে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া মার্কেটের ৫তলা মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে নিচে নেমে নিখোঁজ হয়। সন্ধ্যায় ওমর ফারুকের স্ত্রী তার মোবাইলে ফোন দিয়ে তাকে না পেয়ে তার পিতাকে জানায়। পরে ওমর ফারুকের শ্বশুর ওমর ফারুকের সফর সঙ্গী তানভীরকে ফোন দিলে তিনি জানান ৬/৭ ঘন্টা যাবৎ ওমর ফারুককে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজের খবর পেয়ে তার স্ত্রী কয়েক বার চেষ্টা করে তাকে ফোনে না পেয়ে ম্যাসেনজারে ম্যাসেজ লিখেন, কিছুক্ষণ পর তার স্বামীর ম্যাসেনজার থেকে একটি বার্তা আসে সেখানে লিখেন “আমরা আপনার স্বামীকে তুলে নিয়ে আসছি গাউছিয়া থেকে, “কি বলবেন বলেন, কি বলতে চান, সর্বোচ্চ ১মিনিট। আমরা আপনার স্বামীকে তুলে নিয়ে এসেছি, এর কারণ আপনার স্বামী ভাল জানে, ফেজবুকে পোস্ট দেখেননি আপনার স্বামী কি পোস্ট করেছে, অনলাইনে আর পাবেন না উনাকে, আপনি ২সন্তান নিয়ে টেনশন করবেন বিদায় আপনার স্বামীর অনুরোধে আপনাকে জানালাম”। পরে তাকে ১মিনিট কথা বলতে দেয়া হয় তখন নওমুসলিম ওমর ফারুক তার স্ত্রীকে বলেন আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে আমি জানিনা আমার ছেলে-মেয়েকে দেখে রেখো বলার পর তার পিতা নওমুসলিম আবু বকর সিদ্দিক বৌয়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে বাবা-বাবা বলে ডাক দিলেও ওই পান্থ থেকে আর কোন জবাব আসেনি, এর কয়েক সেকেন্ড পর ফোন কেটে দেয়া হয়। এর পর থেকে রূপগঞ্জ থানা ও নারায়নগঞ্জ র্যাব ৩ এর কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ ওমর ফারুকের পিতা নওমুসলিম আবু বকর সিদ্দিক ও তার মা শান্তি রানী বিশ্বাস বলেন, আমরা আমাদের ছেলেকে ফেরত চাই। আমার ছেলে যদি কোন অন্যায় করে তাহলে তাকে হাজির করে আদালতের মাধ্যমে বিচার করা হউক।
ওমর ফারুকের স্ত্রী শারমিন আক্তার লিমা বলেন, আমার স্বামী একজন ভাল মানুষ। তাকে কি কারণে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে তা আমরা জানিনা। আমি আমার দু’টি অবুঝ সন্তান নিয়ে আজ ১৫টি দিন মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি প্রধানমন্ত্রী’সহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কাছে আমার স্বামীকে উদ্ধারে সহযোগীতা চাই।