অনলাইন ডেস্ক:
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির পদ হারানো হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি এবং পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
গুলশান থানায় করা দুটি মামলার একটি করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। একই থানায় দায়ের করা অন্য মামলাটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো একত্রিত করে করা হয়। তৃতীয় মামলাটি করা হয় পল্লবী থানায়। সেখানে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি করা হয়েছে।
গুলশাল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় হেলেনার বিরুদ্ধে ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী সাজা হতে পারে ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরের তা দেখে নেয়া যাক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মূলত হানাহানি, ভীতি প্রদর্শন ও রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা অবনতির কথা বলা হয়েছে। এ আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে: আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদি।
২৫ ধারায় বলা হয়েছে: আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদি
(১) বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে- (ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা (খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করিবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা তদুদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
২৯ ধারায় বলা হয়েছে: মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদি
(১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLV of 1860) এর section 499 এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
৩১ ধারায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ডের কথা বলা হয়েছে।
(১) বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যাহা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে হাজির করা হয়। সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। পরে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
বিচারক হাকিম রাজেশ চৌধুরী হেলেনা জাহাঙ্গীরের কোনো কথা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের লোক। আমি আওয়ামী লীগের লোক। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৫টি দেশ ভ্রমণ করেছি। আমি কেন দলের বিরুদ্ধে কথা বলবো। আমি কোনো অপরাধ করিনি। তার প্রমাণ নেই।’
হেলেনার আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এজাহার দেখলে ২৫, ২৯, ৩১ ধারায় যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে কোথাও কোনো উল্লেখ নেই, কখন কোথায় কীভাবে কার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তার কোনো উল্লেখ নেই। আসামি একজন সিআইপি, এই মামলায় রিমান্ড কী দরকার? রিমান্ডের কোনো যুক্তি নেই।’
নানা কারণে আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সভাপতি উল্লেখ করে সম্প্রতি ফেসবুকে চাকরিজীবী লীগের নেতা তৈরির আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে হেলেনা জাহাঙ্গীরের আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ বাতিল করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, চাকু, বৈদেশিক মুদ্রা, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন আইপি টেলিভিশন জয়যাত্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।