কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কাগজে কলমে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী ও পাশ্ববর্তী এলাকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে পদ্মা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবে কুঠিবাড়ীর প্রধান অংশে নেই বাঁধ। এতে হুমকির মুখে কুঠিবাড়ীসহ আশেপাশের অন্তত ছয়টি গ্রামের বাসিন্দারা।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশব স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ীটি পদ্মানদী সংলগ্ন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬ – ২০১৮ অর্থবছরে কুঠিবাড়ী ও পাশ্ববর্তী এলাকা সংরক্ষণে প্রায় ১৬৭ কোটি ব্যয়ে তিন হাজার ৭২০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তন্মধ্যে কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর অংশে দুই হাজার ৭২০ মিটার এবং শিলাইদহ অংশে এক হাজার মিটার।
এলাকাবাসী জানায়, প্রকল্পের নামে রয়েছে কুঠিবাড়ী রক্ষাবাঁধ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কুঠিবাড়ীর প্রধান অংশের দেড় কিলোমিটার বাদ রেখেই কাজ সমাপ্ত করে। এতে প্রতিবছরই বর্ষায় পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথেসাথে বৃদ্ধি পাই ভাঙন। হুমকিতে থাকে কুঠিবাড়ী, কোমরকান্দি, কান্দাবাড়িয়া, জাহেদপুর, বেলগাছি সহ আশপাশের অন্তত ছয়টি গ্রামের বাসিন্দারা।
সরেজমিন গেলে এলাকাবাসী আরো জানায়, বর্ষার শুরুতে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। মাঝেমাঝেই বৃষ্টি আর বাতাস বয়ছে। এতে কোমরকান্দির জালাল সর্দারের বাড়ি থেকে জলা প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত ভেঙে পড়ছে নদীর পাড়। ভাঙনের আতঙ্কে নিয়ে জীবন পার করছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ।
এবিষয়ে পদ্মাপাড়ের মাহতাব উদ্দিন শেখের ছেলে উম্মত আলী বলেন, পনের শতক জমি ছিল। ভাঙতে ভাঙতে আর সাত শতক আছে। এবারও ভাঙন লেগেছে। ভেঙে গেলে এবার আর কিছুই বাকী থাকবে না। আব্বাস আলী (৬৫) বলেন, ঘরের পিছনে আর একহাত জায়গা আছে। আমরা গরিব মানুষ। কোথাও যাওয়া জাগা নাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, যেন একটা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
ভুক্তভোগী জালাল সর্দার বলেন, ভাঙনের জন্য দুইবার ঘর সরিয়ে নিয়েছি। আবারও নদী ভাঙতে ভাঙতে ঘরের কিনারে চলে আইছে।গরীব মানুষ বারবার ঘর সরানোর টাকা কই পাব। কুলসুম বেগম বলেন, পানির শব্দে রাতে ঘুম হয়না। কখন যেন ভেঙে চলে যায়।একটি বাঁধ নির্মাণ করা হলে আমরা বেঁচে যেতাম।
এবিষয়ে শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেক বলেন, প্রতিবছরই পদ্মায় ভাঙন লাগে।এবার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধ না করা হলে হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি,ঘর-বাড়ি সহ ৬ টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, কুঠিবাড়ী প্রতিরক্ষা হিসেবে প্রায় চার কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু কুঠিবাড়ীর প্রধান দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ না হয়নি ফলে হুমকির মুখে কুঠিবাড়ী।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর কাস্টোডিয়ান মোঃ মুখলেছুর রহমান বলেন, পদ্মানদী থেকে কুঠিবাড়ীর দুরত্ব মাত্র কোয়ার্টার কিলোমিটার দুরে। কুঠিবাড়ীর প্রধান অংশে বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এতে হুমকির মুখে রয়েছে কুঠিবাড়ী। কুঠিবাড়ী রক্ষা করতে না পারলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, কুঠিবাড়ী একটি ইতিহাসের নাম। রাষ্ট্রীয় সম্পদ। যেকোন উপায় কুঠিবাড়ী রক্ষা করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আছরাফ উদ্দিন বলেন, বাঁধ নির্মাণের সময় কুঠিবাড়ী এলকায় কোন ঝুঁকি ছিলোনা। পরবর্তীতে সেখানে ঝুঁকি বেড়েছে। নতুন করে বাঁধ নির্মাণের জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।