আশঙ্কাজনকভাবে হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, যদি কার্বন নিঃসরণ কমানো না যায় তাহলে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো বরফ গলার কারণে সামনের দিনে মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হবে। বর্ষায় রেকর্ড বন্যার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও তিস্তার মতো নদীগুলো ব্যাপক পানি সংকটে পড়বে। যা জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলবে।
প্রতিবেদন বলছে, গত কয়েক দশকে হিমবাহ গলার ফলে বন্যার ঘটনা বেড়েছে, বিশেষ করে গঙ্গা ও সিন্ধু অববাহিকায়। উচ্চ কার্বন নির্গমনের ফলে ভবিষ্যতে বন্যার প্রকোপ আরও বাড়বে।
হাই মাউন্টেন এশিয়া মূলত মেরু অঞ্চলগুলোর বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম বরফ অঞ্চল, যা একে ‘তৃতীয় মেরু’ হিসেবে পরিচিত করেছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমালয় অঞ্চল হিমবাহ-সম্পর্কিত দুর্যোগের জন্য বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। বিশ্বব্যাপী ১.৫ কোটি মানুষ হিমবাহ হ্রদ বিস্ফোরণের বন্যার (GLOF) ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি ভারতেই বসবাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলতে থাকায় হিমবাহ হ্রদের সংখ্যা ও আয়তন বাড়ছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো না হলে আরও খারাপ হবে। ২১০০ সালের মধ্যে হাই মাউন্টেন এশিয়ায় হিমবাহ হ্রদের বিস্ফোরণজনিত বিপর্যয়ের ঝুঁকি তিনগুণ হতে পারে।
২০০ কোটি মানুষ পাহাড়ী পানির ওপর নির্ভরশীল
জাতিসংঘ বিশ্ব জল উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৫ অনুসারে, পর্বত অঞ্চল বিশ্বব্যাপী বার্ষিক মিঠাপানির ৬০% সরবরাহ করে। এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পর্বত অঞ্চলে বসবাস করে এবং দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং জীবিকার জন্য পর্বতের পানির উপর নির্ভরশীল। পর্বত অঞ্চলগুলো পশুপালন, বনজ সম্পদ, পর্যটন এবং জ্বালানি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী হিমবাহগুলো নজিরবিহীন হারে গলছে, এবং পর্বত জলপ্রবাহ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাবগুলোর প্রথম শিকার হচ্ছে।
‘আমরা যেখানে থাকি না কেন, কোনো না কোনোভাবে পর্বত ও হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো এখন চরম সংকটে পড়েছে’, বলেছেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে। তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে এবং সবচেয়ে কার্যকর সমাধান পেতে বহুপাক্ষিক উদ্যোগ প্রয়োজন।’
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএডিএফ)-এর সভাপতি ও UN-Water-এর চেয়ারম্যান আলভারো লারিও পর্বতবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘পানি পাহাড় থেকে নিচে নামে, কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা উপরের দিকে বাড়ে। পৃথিবীর পর্বতগুলো আমাদের ৬০% মিঠাপানি সরবরাহ করে, তবে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সংরক্ষণকারী সম্প্রদায়গুলোর অনেকেই খাদ্য সংকটে ভুগছে। আমাদের অবশ্যই তাদের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে বিনিয়োগ করতে হবে।’