Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
হাসপাতালে ভর্তি ২৭০ দিন, এখনও পরিচয় মিলেনি

হাসপাতালে ভর্তি ২৭০ দিন, এখনও পরিচয় মিলেনি

 জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে ১১ বছর বয়সী অজ্ঞাত শিশু গুরুতর আহত হয়ে ২০৭দিন যাবত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে ভর্তি রয়েছে।

২৭০দিন হয়ে গেল এখনও আহত ওই শিশুর পরিবারের পরিচয় মিলেনি। কয়েকদিন আগে শিশুটি অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হলেও এখন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে এতদিন শিশুটি চোখ মেলতে পারতো ও কথা বলার চেষ্টা করতো৷ মুখে খাবার দিলে তা গিলতে পারতো। শিশুটি আগের মত চোখ মেলতে পারলেও এখনও কথা বলার শক্তি পাইনা। কাউকে চিনতে পারেনা৷

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. একেএম নিজাম উদ্দিন শিশুটির শারীরিক পরিস্থিতি প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেন।

সার্জারী বিভাগের সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞাত শিশুটি ৯ মাস আগে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে ভর্তি হয়। ওই শিশুর কেউ নেই বলে, সার্জারী বিভাগ হয়েছে শিশুটির চিকিৎসা শেষস্থল। শিশুটিকে নিজের বাচ্চার মত করে খাওয়ানো ও গোসল থেকে শুরু ওষুধ পুশের কাজটা করছেন চতুর্থ শ্রেনীর পরিচ্ছন্নকর্মী উজ্জ্বল মিয়া৷

ওইদিন থেকে হাসপাতালে সার্জারী বিভাগের পরিচ্ছন্নকর্মী উজ্জ্বল মিয়া ও বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় শিশুটির শারিরীক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।

তবে বর্তমানে ওই শিশুর তেমন কোন ওষুধপত্র প্রয়োজন হয়না। শিশুটির খাওয়া-দাওয়া জোগান দিচ্ছে হাসপাতালের স্টোর কিপার আনোয়ার হোসেন, ওয়ার্ড মাস্টার এনামুল হক ও পরিচ্ছন্নকর্মী উজ্জ্বলসহ কিছু সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। তবে শিশুটিকে হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক বা নার্সরা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও খোঁজ নেননি বলে অভিযোগও করেছেন পরিচ্ছন্নকর্মী উজ্জ্বল মিয়া। শিশুটির পরিচয় শনাক্তের জন্য জেলার কিছু সাংবাদিক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচারণা চালাচ্ছে৷

তবে শিশুটির ভাল-মন্দ ও উন্নত চিকিৎসার করার মত কেউ না থাকলেও বিশিষ্ট সমাজসেবক সাংবাদিক সুমন রায় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আজহার উদ্দিন ঠিকই শিশুটির খোঁজ-খবর রাখছেন। ইতিমধ্যে তারা কিছু মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় মাধ্যমে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার চেষ্টাও করছেন।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. হিমেল খান জানান, প্রায়ই নয়মাস আগে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ছিল। এখন পর্যন্ত শিশুটি অসচেতন রয়েছে। শিশুটির শারিরীক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হলেও এখন আবার আগের মতই। ওই শিশুর যাবতীয় ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিশুটির ব্রেনের দুইটি সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে৷ রিপোর্ট বেশী ভাল না। শিশুটির স্বাস্থ্যের উন্নতি দ্রুত ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।

শিশুটির পরিচয় শনাক্তের ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, এখনও ১১বছর বয়সী অজ্ঞাত শিশুটির পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে পরিবারের লোকেরা শনাক্তের জন্য পুলিশ কাজ করছেন। শিশুটির চিকিৎসার জন্য যে-কোন ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ৩রা জানুয়ারি স্থানীয় এক ব্যক্তি দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট রেলপথের আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বৈকণ্ঠপুর এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা একটি শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পরে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছিলেন। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত থাকায় সেখানে শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply