নোয়াখালী প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। জানা যায়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি অতি প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। গভীর নিম্নচাপটি কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ভোলার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। যার ফলে নোয়াখালী জেলাকে সাত নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এতে নোয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন।
সভায় ঘূর্ণিঝড় হামুনের ক্ষতি এড়াতে নোয়াখালীতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত নোয়াখালীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপকূলে আট হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সব সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়সহ ৪৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নগদ টাকা, চাল ও গম মজুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ১০২টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে এবং জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় হামুন সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সবাই একে অন্যের পাশে থাকব। যদি জনপ্রতিনিধি এবং মানুষজন সোচ্চার থাকে তাহলে যেকোনো পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করতে পারব। এক কথায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা দোয়া করি যেন আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। কোনো ধরনের অসুবিধা হওয়া বা হওয়ার আগে থেকেই আমরা প্রস্তুত থাকব।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগের আগে ও পরে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেন নিরাপদ থাকে সে জন্য পুলিশ পাহারায় থাকবে। দুর্যোগকবলিত চার থানায় ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খানের সঞ্চালনায় সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজিমুল হায়দার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা, সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসমাইল হোসেন, বিআরটিএ নোয়াখালীর মোটরযান পরিদর্শক মাহবুব রাব্বানীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, গণমাধ্যমকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।