Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন প্রধান লক্ষ্য: দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় অগ্রাধিকার

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন বাস্তবায়ন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক পাঠদান নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশব্যাপী শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিস্তৃত করা হয়েছে। গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। আজ ১৩ জুলাই ২০২৪ তারিখ শনিবার গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের সিনেট হলে ২৬তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণে এসব কথা বলেন উপাচার্য। সিনেটের এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর ও সিনেট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। এ অধিবেশনে বাজেট ঘোষণা করেন ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। তিনি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেন সর্বমোট ২০৯৭ কোটি ৩১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। প্রস্তাবিত এ বাজেটের মধ্যে রাজস্ব বাজেটে ৭২১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ১৩৭৫ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দীর্ঘ আলোচনা শেষে সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া সিনেট অধিবেশনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ৫৬৪ কোটি ৫০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদিত হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে সিনেট চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সামনে একমাত্র পথ-সঠিক পদক্ষেপ ও পরিচর্যার মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সমন্বিত উপায়ে উৎকৃষ্ট শিক্ষা, দর্শন ও সময় উপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টি। এর জন্য প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, পরিমার্জিত কারিকুলাম, যুগোপযোগী বিষয়সমূহ প্রবর্তন, নতুন নতুন দক্ষতাভিত্তিক কোর্স প্রবর্তন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর শিক্ষার্থীর জন্য বিকল্প দক্ষতাভিত্তিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন মানবিক বোধসম্পন্ন ইতিহাস ও সমাজসচেতন শিক্ষার্থী তৈরি। দেশের মূল্যবোধকে ধারণ করবে এমন দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত- গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সৃজনশীল, সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক।’

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বে আদর্শগত নেতৃত্ব দেবার জায়গায় দেখতে চাই। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের সামনে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে অদম্য গতি, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ অবশ্য পাঠ্য করে যেমন একদিকে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরিতে দৃঢ়তা রেখেছে, তেমনি আইসিটি কোর্সকে অবশ্য পাঠ্য করে তাদেরকে তৈরি করতে চাই যোগ্যতর মানুষ হিসেবে। প্রতিবন্ধকতা আমাদের আছে, সমস্যাও আছে বহুমুখী। কিন্তু সেসব উত্তরণে আমাদের নিজস্ব শক্তি, নেতৃত্ব ও ভিত্তি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের নিরন্তর অনুপ্রেরণা। তাঁর আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, সত্য ও সুন্দরের পথে দৃঢ়তা আমাদেরকে বারংবার নতুন প্রাণশক্তি দেয় সামনে এগিয়ে চলার। তাঁরই কন্যা আমাদের প্রধান অগ্রসৈনিক, গণতান্ত্রিক ভিত-বুনিয়াদের কারিগর, জাতিরাষ্ট্রের মানস ও জীবনীশক্তি সৃষ্টির পেছনের প্রধান ব্যক্তিত্ব। তাঁরই নির্দেশনা, অনুপ্রেরণা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচর্যায় আমরা সম্মিলিত সমন্বয়ে এগিয়ে চলছি ক্রমাগত। আসুন বঙ্গবন্ধু কন্যার এই পথচলা ও দৃঢ়তার নেতৃত্বে আস্থাবান হয়ে আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা আর কাঙ্ক্ষিত মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলি। জ্ঞানের শক্তির প্রখরতায় অশুভ পদানত হোক। বিজয় সূচিত হোক শুভের, সুন্দরের, স্বচ্ছতা, সৃজনশীলতা, বিজ্ঞান ও মানবতার। যুদ্ধ, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা আর রাজনৈতিক সংঘাত ও অন্ধকারের সকল পথকে রুদ্ধ করুক জ্ঞান নির্ভর, আদর্শনিষ্ঠ, সুষম ব্যবস্থার এক নতুন সমাজ; যা আমাদের গেরিলা যোদ্ধাদের বুকের স্পন্দনে ছিল। এ ভাবাদর্শই বাঙালির অমর সুর ও জাতিসত্তা বিকাশের মহাকাব্য। জাতির পিতা মুজিব সে মহাকাব্যের রচয়িতা।’

এ সিনেট অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ. বি. তাজুল ইসলাম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন এমপি, মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এমপি, এস. এম. কামাল হোসেন এমপি, সাজ্জাদুল হাসান এমপি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, পিএসসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবিরসহ ২১ জন সিনেট সদস্য এছাড়া সিনেট অধিবেশনে বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদসহ ৬৪ জন সিনেট সদস্য ও ২ জন আমন্ত্রিত সিন্ডিকেট সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সিনেট অধিবেশনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ও তাদের আপনজন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিনেট সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল- হোসেন। তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিনেট অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করেন সিনেট চেয়ারম্যান ও ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply