অনলাইন ডেস্ক:
সবে যুদ্ধ শেষ করে ফিরেছেন এক মুক্তিযোদ্ধা। কাঁধে ঝুলছে রাইফেল। শরীর খালি হলেও পরনে প্যান্ট ও পায়ে জঙ্গল বুট (রাবারের সোল ও কাপড়ের সমন্বয়ে তৈরি)। কোমরের বেল্টে গুলিভর্তি কার্তুজ। এক হাতে উঁচিয়ে রেখেছেন একটি পায়রা। অন্য হাত দিয়ে আঁকড়ে রেখেছেন রাইফেলের বেল্ট। হাতের পায়রাটি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা তাঁর। বগুড়া শহরের প্রবেশদ্বার বনানী মোড় সড়ক দ্বীপে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি ‘স্বাধীনতা’।
এটিই বগুড়ার একমাত্র ভাস্কর্য। স্বাধীনতার ঠিক ২৬ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে ভাস্কর্যটির উদ্বোধন হয়। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বলা হয় বগুড়াকে। এই ভাস্কর্যের প্রতিকৃতি দেখলে মনে হবে যেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধ জয়ের পর এক যোদ্ধা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে স্বাগত জানাচ্ছেন বগুড়ায় আগতদের।
এ কারণে বিগত জোট সরকারের সময় শহরের বনানী মোড়ে সড়ক দ্বীপে ফের স্থাপন করা হয় ভাস্কর্যটি। এর আগে এটি স্থাপন করা হয়েছিল বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের পাশে পোস্ট অফিসের সামনে খোলা জায়গায়। সাত বছর সেখানেই ছিল ভাস্কর্যটি। এরপর শহরের রাস্তা বর্ধিতকরণের সময় সেটি সরিয়ে বনানীতে নেওয়া হয়।
বগুড়ার একমাত্র ভাস্কর্যটি তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয় মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সেই সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মন্টু। তিনি নিজে এবং আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ইলিয়াস হোসেন মিলে ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তাঁদের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পী সুলতানুল ইসলাম। তিনি ঢাকায় থাকতেন। প্রয়াত শিল্পীর ছেলে স্বরূপ জানান, শিল্পী সুলতানুলের অর্ধশতাধিক ভাস্কর্য রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বেশির ভাগ কাজই তিনি নিজ হাতে করতেন। কিছু কিছু তাঁর পরিকল্পনায় অন্য শিল্পীরা বাস্তব রূপ দিতেন।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মন্টু জানান, ভাস্কর্য ‘স্বাধীনতা’ তৈরি করতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। এটি নির্মাণে মূলত হোয়াইট সিমেন্ট, চুনাপাথর, রড ও রং ব্যবহার করা হয়েছে। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৫ ফুট। এর মধ্যে বেদির উচ্চতা সাত ফুট। অফ হোয়াউট রঙের এই ভাস্কর্যে রাইফেলের নলটি কালো রং করা ছাড়া আর কোনো রং ব্যবহার করা হয়নি।
বগুড়ার বনানী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ‘স্বাধীনতা’ দাঁড়িয়ে থাকলেও সেটির সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই। এটির ভেঙে যাওয়া একটি পা লোহার তার দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। উল্টো ভাস্কর্যের আশপাশে সাইনবোর্ড-ব্যানার লাগিয়ে এর সৌন্দর্যহানি করা হয়েছে।