দ্বাদশ জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। কেউ কেউ বলছিলেন, স্বতন্ত্ররাই এবার প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবেন। আবার কেউ কেউ বলছিলেন, তাঁরা সংসদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারি দলে মিশে যাবেন। অবশেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, স্বতন্ত্ররা সংসদে স্বতন্ত্র হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন।
একাধিক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জানান, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে বসে সংসদে তাঁদের ভূমিকার বিষয়ে জেনে নিতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক সংসদ সদস্য জানান, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তাঁদের বক্তব্যে নিজের এলাকায় নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রাখেন। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয় দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবেন স্বতন্ত্ররা
জাতীয় সংসদে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এ আসনগুলোতে তাঁরা নিজেরা প্রার্থী না দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা যাঁদের মনোনয়ন দেবেন, তাঁদেরই সমর্থন দেবেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, ‘আমরা যে সংরক্ষিত নারী আসনগুলো পাব সেগুলোতে সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ অন্য দলের দুই এমপিরও
বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা এবার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা দুজনও উপস্থিত ছিলেন। এই দুই নেতাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করতে তাঁদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি এখন আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
একই ধরনের কথা বলেন নীলফামারী-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম। তিনি নীলফামারী জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন। এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁকে বহিষ্কার করে জাতীয় পার্টি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুই সংসদ সদস্যকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখতে বলেন। তাঁদের কোনো সমস্যা বা প্রয়োজন হলে তা দেখার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ইশতেহার বাস্তবায়নে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যসহ সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটি জানান।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাঁরা দাবি করেছেন আওয়ামী লীগেই থাকতে চান। ভিন্ন কোনো নামে পরিচয় দিতে গেলে আমাদের বিবেক-আবেগ আহত হয়। নিজেরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহ বিভেদ মিটিয়ে ফেলতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাঁরা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবেন। এই একটি বিষয় আমাদের সংসদ নেতা, দলের সভাপতি পরিষ্কারভাবে বলেছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিভিন্ন মার্কার কিছু সংঘাত, সহিংসতা, অন্তর্কলহ—এসব বিষয় রয়েছে। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না আমাদের সবাইকে বলেছেন।’
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬২ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁদের তিনজন ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। এবারের সংসদে আওয়ামী লীগের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্ররা। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। আগামীকাল ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে।
গণভবনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায়।
ছবি : পিএমও