দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা: কুমিল্লার দেবিদ্বারে স্ত্রীর বিয়ে প্রতারণায় সর্বস্বান্ত প্রবাসী এক স্বামীর পরিবার। প্রথমে বিয়ে পরে মোটা অংকের কাবিন প্রতারণার শিকার একাধিক ভোক্তভোগী জানান, বিয়ের দু-এক মাস না যেতেই কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে চাপ প্রয়োগ করে। তার বিয়ের কাবিন পরিশোধ করতে যেয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে আরও ৭/৮টি পরিবার।
সর্বশেষ ওই নারীর বিয়ের কাবিন প্রতারণার শিকার হয়েছেন দেবিদ্বার উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের গাজী রওশন আলীর ছেলে সৌদি প্রবাসী গাজী সুজন। প্রতারক ওই নারীর নাম লাকি আক্তার। সে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার চরভবনাথপুর গ্রামের আবুল বাসারের মেয়ে।
ভুক্তভোগী গাজী সুজন জানান, সৌদি আরবে গাজী সুজনের সাথে পরিচয় হয় ওই নারীর। পরে সম্পর্কের জের ধরে এক পর্যায়ে ওই নারী তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। গাজী সুজন ওই নারীর বাবা-মায়ের সাথে কথা বললে তারা লাকির সম্প্রতি স্বামীর সাথে ডির্ভোস হয়েছে বলে জানান। তার সাথে বিয়েতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। পরে গাজী সুজন প্রথমে পাঁচ লাখ টাকার কাবিনে তাকে বিয়ে করেন। ফেক্সের মাধ্যমে সৌদি আরবে সুজনের কাছে পাঁচ লাখ টাকার কাবিননামা পাঠান ওই নারীর বাবা প্রতারক আবুল বাসার। স্বামীর কাছ থেকে কৌশলে কাবিনের পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে নেন ওই নারী। এছাড়াও বিভিন্নভাবে আরও ১৮ থেকে ২০ লাখ নগদ টাকা হাতিয়ে নেয় তার কাছ থেকে। বিয়ের দেড় বছর না যেতেই কোনো কারণ ছাড়াই সৌদি আরবের বাসা থেকে টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন প্রতারক লাকী আক্তার। পরে স্বামী সুজন এ বিষয়টি তার বাবা মাকে জানালে তারা বলেন, ‘আপনি দেশে আসনে আমার মেয়ে আপনার সংসার করবে তার ভুল হয়ে গেছে’। তখন লাকি আক্তারও স্বামী সুজনের কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান, এরপর আবার শুরু হয় সম্পর্ক।
ভোক্তভোগী সুজন আরও জানান, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে গাজী সুজন দেশে আসেন। এসে সরাসরি স্ত্রী লাকি আক্তারের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে যান। পরে গভীর রাতে সুজনকে একটি রুমে আটকিয়ে পাসপোর্টসহ নগদ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। জোরপূর্বক পুনরায় ১২ লাখ টাকার কাবিন নামায় স্বাক্ষর নেন লাকী ও তার পরিবারের লোকজন। পরদিন সকালে সুজন চলে আসলে এরপর থেকে কাবিনের ১২ লাখ টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ শুরু করে লাকী ও তার পরিবার। তা না হলে সৌদি আরবে থাকাবস্থায় স্বামীর সাথে তোলা ওই নারীর কিছু অন্তরঙ্গ ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে দিতে থাকে। স্বামী সুজন প্রতারণা শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে ১২ লাখ টাকা না দেয়ায় সুজনের সাথে তোলা অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কিছু ছবি ‘শুকতারা’ নামে একটি ফেক আইডি দিয়ে পোস্ট করে উল্টো তার নামেই সোনারগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে লাকি আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফোন ধরে কথা না বলে পরিচয় গোপন করে লাইন কেটে দেন।
অভিযুক্ত লাকি আক্তারের বাবা আবুল বাসার বলেন, এটা আইনের বিষয়। আইনে যা হয় আমরা তাই মেনে নেব। তাকে জোর করে কাবিন করা হয়নি। আমার মেয়ের একটা বিয়ে হয়েছে। প্রথমে ৫ লাখ পরে ১২ লাখ টাকা কেন কাবিন হলো এ ব্যাপারে তিনি বলেন, তাকে জোর করা হয়নি সে স্বেচ্ছায় ১২ লাখ টাকার কাবিন করেছে।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউপি সদস্য মো. মোশারফ হোসেন বলেন, প্রবাসী সুজন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ওই মেয়ের কাজই প্রতারণা করা। সুজন ছাড়াও তার আরও ৭/৮ টি বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। এর চেয়ে বেশি সুজন বলতে পারবেন। সুজন যা বলেছেন সব সত্য বলেছেন। আমার কাছ থেকে আরও শুনতে হলে সরাসরি দেখা করতে হবে। মোবাইলে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।