অনলাইন ডেস্ক:
‘স্কুল খুলে দিয়ে বাচ্চাদের ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারি না’, বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এখানে স্কুল খোলার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু আমেরিকাসহ বিভিন্ন স্থানে স্কুল খুলে তারা আবার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তাই আমরা এই মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে চাই না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে সংবিধান সংশোধনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ বাজিয়ে শোনানো হয়। এরপর স্পিকার অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশটি পাঠ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশেও স্কুল খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হওয়ায় ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় স্কুল খোলা সমীচীন হবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের খুব কষ্ট হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার পরও তাদের তো আমরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দিতে পারি না। করোনাভাইরাস একটা সংক্রামক ব্যাধি। এখনো এর চিকিৎসা বের হয়নি, তার পরও আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, মানুষ ভালো হচ্ছে।’
অটো প্রমোশনের ব্যাখ্যা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আগে তো এই সেমিস্টার ব্যবস্থা ছিল না। আমি প্রথমবার সরকারে এসে সেমিস্টার সিস্টেম চালু করি। কাজেই সেখানে সারা বছর তারা যে পরীক্ষা দিয়েছে, তারই ভিত্তিতে একটা রেজাল্ট দেওয়া হবে। এটা কিন্তু ইংল্যান্ডেও দিয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই দিয়েছে। এতে খুব বেশি ক্ষতি হয় না। এরপর তো শিক্ষার্থীরা স্কুল করবে, পড়বে, পরীক্ষা দেবে। আবার পরীক্ষা দেবে। সেই সুযোগ তাদের আছে। কাজেই অটো প্রমোশনে খুব ক্ষতি হয়ে গেল, এটা কিন্তু ঠিক নয়। ওই এক দিন বসে লিখে পাস করলেই সেই পাস, আর সারা বছর পরীক্ষা দিয়ে যে রেজাল্ট, সেই রেজাল্ট রেজাল্ট না, এটা তো হতে পারে না। বরং সেইভাবে যদি সারা বছরের রেজাল্ট একসঙ্গে করে প্রমোশন দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে সেটা তো তাদের মেধার আরো বড় পরিচয়টা পাওয়া যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ-আমেরিকায় শুরু হয়েছে। সেই ধাক্কা আমাদের দেশেও আসতে শুরু করেছে। সে জন্য সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার আমরা আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি। যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে বা যেখানে এখনো রিসার্চ চলছে, আমরা আগাম বুকিং দিচ্ছি, যাতে সেটা চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমরা আনতে পারি। সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘করোনা হঠাৎ করে আসার জন্য অনেক কাজ আমরা করতে পরিনি, কিন্তু এবার আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি।’
বাকশাল গঠন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নানা অপপ্রচার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে সমৃদ্ধ ও দ্রুত উন্নয়ন করতে দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অপবাদ দেওয়া হলো যে তিনি একদলীয় শাসন ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন!’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে মানুষটি (বঙ্গবন্ধু) তাঁর জীবনের সবটুকু বিসর্জন দিয়েছেন একটি জাতির জন্য, তিনি কী কারণে ক্ষমতার লোভ করবেন? ক্ষমতার লোভ থাকলে তো বঙ্গবন্ধু অনেকবারই ক্ষমতায় যেতে পারতেন।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা সম্পৃক্ত, আমাদের প্রতিরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সব কাজে যারা সম্পৃক্ত সবাইকে নিয়ে এবং দল-মত-নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধু ঐক্য সৃষ্টি করেছিলেন, জাতীয় ঐক্য। তাঁর লক্ষ্য ছিল উৎপাদন বৃদ্ধি করা, দেশকে সমৃদ্ধশালী করা এবং দ্রুততার সঙ্গে দেশকে উন্নত করা। যার কারণে তিনি ক্ষমতাকে একেবারে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নটা শুরু হবে। তার জন্য বঙ্গবন্ধু যে পরিবর্তনটা এনেছিলেন, সেটাকে ভালোভাবে করারও সুযোগ পাননি। তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি