অনলাইন ডেস্ক:
হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২০’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় হজগমনেচ্ছুদের প্রতারণা থেকে সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। হজ ব্যবস্থাপনায় কেউ যদি বাংলাদেশের হাজিদের সঙ্গে সৌদি আরবে গিয়েও প্রতারণা করেন, সেই প্রতারণা বাংলাদেশে করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবে গিয়ে হাজিদের সঙ্গে করা অপরাধের জন্য শাস্তি পায় না। আইনি কাঠামো না থাকায় সরকারও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। অর্থাৎ অপরাধ করেও দায়মুক্তি পেয়ে যায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা। প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে এ ধরনের প্রতারণার জন্য দেশে শাস্তি পেতে হবে প্রতারকদের।
প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে অনিয়মের জন্য হজ এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল করা যাবে এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা যাবে। ওমরাহ এজেন্সির ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিল ও ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। আর অপরাধের জন্য কোনো হজ এজেন্সিকে যদি পর পর দুই বছর সতর্ক করা হয়, তাহলে লাইসেন্স দুই বছরের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত থাকবে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে উল্লিখিত আইনের খসড়াসহ মোট পাঁচটি বিষয় অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রিসভার নতুন সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের জানান। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রিসভা বৈঠকে যোগ দেন।
বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনা নীতিমালার মাধ্যমে চলছে। এ নীতিমালার আলোকে নতুন এ আইনটি প্রণয়ন হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, নীতিমালার মাধ্যমে কাজ করতে বিভিন্ন কারণে কিছু অসুবিধা হতো, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেত না। নিলেও আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসতেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আইনটি হলে হজ ব্যবস্থাপনা আরো ভালো হবে। ২০১১ সালে সৌদি আরব হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। এর সঙ্গে চলতে গেলে আইনের প্রয়োজন। পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে নতুন আইন করে ফেলেছে।
মহাসড়ক আইনের খসড়া : নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিত করতে মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত এই আইন পাস হলে অনুমতি ছাড়া মহাসড়কে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা তোরণ টাঙালে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। আর মহাসড়কের সংরক্ষণ রেখার মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে দুই বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া মহাসড়ক ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, মহাসড়কের পাশে উপযুক্ত গাছ লাগাতে হবে। কড়ই গাছ রাস্তার পাশে লাগালে ডালপালা সড়কে চলে আসে। সড়কে ডালপালা না আসে সে ধরনের গাছ লাগাতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মহাসড়কের দুই পাশে সড়ক থাকবে, তাই বৃষ্টির পানি বা যেকোনো পানি যেন দ্রুত নেমে যায়, সেই ব্যবস্থা রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। মহাসড়কের পাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে ফুয়েল স্টেশন এবং বিশ্রামাগার রাখতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন।
১৯২৫ সালের হাইওয়ে অ্যাক্ট রহিত করে মহাসড়ক, নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবাধ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ যান চলাচলের জন্য নতুন আইন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মহাসড়কের ক্ষতি কমিয়ে স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং যানবাহন চলাচলের গতিশীলতা নিশ্চিত করতে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, মহাসড়কের মাঝেমধ্যে আন্ডারপাস করা হবে, সেখান দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সিএনজি, রিকশা চলাচল করতে পারবে। সব জায়গায় আন্ডারপাসের ব্যবস্থা থাকবে না, সে ক্ষেত্রে ওভারপাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার বরাত দিয়ে আনোয়ারুল হক বলেন, মহাসড়কে প্রয়োজনীয় দূরত্বে ফুয়েল স্টেশন ও লং ড্রাইভে যাওয়া ট্রাকচালকদের জন্য বিশ্রামের কক্ষ রাখতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এসব স্থাপনা করতে জায়গা নির্ধারণ করেছে। মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলতে পারবে না। পাশের সার্ভিস লেনে সেসব যানবাহন চলবে। তবে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে পারবে। মহাসড়কগুলোর মাঝখানে ডিভাইডার থাকবে। মহাসড়কের পাশে অবকাঠামো নির্মাণ করলে, ফসল, খর বা পণ্য শুকালে, ক্রসিং এরিয়া বাদে অন্য জায়গা দিয়ে হাঁটলে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
যুক্তরাজ্য থেকে ফিরলে স্ট্রং কোয়ারেন্টিন : যুক্তরাজ্য থেকে কেউ দেশে ফিরলে তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভ করার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত দেন।
কাটা পড়ছে সফিপুর বনের ১১ হাজার গাছ : মন্ত্রিসভা বৈঠকে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের জন্য টাঙ্গাইলে সংরক্ষিত বনের ১১ হাজার ২৪৬টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, নুয়া-এলেঙ্গা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপার-নকলা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য টাঙ্গাইল জেলার ৫৩.১৫ একর বনভূমিতে বিদ্যমান গাছপালা কাটা এবং অপসারণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সফিপুর বনের ভেতর এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপারে ১১ হাজার ২৪৬টি গাছ কাটতে পারবে। গ্যাস নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ২০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধে গ্যাসলাইনে কাজ হচ্ছে না, সেখানে ৩০ ইঞ্চির পাইপ লাগছে, তাই নতুন লাইন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সংরক্ষিত বনের গাছ কাটার ওপর ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সংরক্ষিত এলাকার গাছ কাটতে হলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক ল্যান্ডস্কেপিং নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য স্থাপিত ‘কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস’-এর কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রিসভার পূর্বগৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।