‘আমার বিরুদ্ধে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ৩৭টি হয়রানিমূলক মামলা হয়। মামলাগুলো থেকে যখন আমি বারবার জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম, যখন সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম, তখন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান আমাকে গুম করার চেষ্টা করেন। সাদা পোশাকধারীরা আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এলিফ্যান্ট রোড থেকে। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু আল্লাহর রহমতে বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার রাজনৈতিক গুরু নসরুল হামিদ বিপুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমি বেঁচে ফিরেছি।’
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলছিলেন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় ও আইজি সাহেবকে ফোন করে আমার ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন এবং আমাকে যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন না হতে হয়, তার জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন। একদম বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ছিল, সারা কেরানীঞ্জের মানুষ সেদিন ধরেই নিয়েছিল সেরাতে আমাকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে।
মানুষের দোয়া ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার নেত্রী ও নসরুল হামিদ বিপু ভাইয়ের সে সময়ের প্রচেষ্টায় আমি প্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফিরেছিলাম।’
দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা উপজেলা চেয়ারম্যানের গৌরব অর্জনের অনুভূতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা প্রাপ্তিই বিশাল আনন্দের। আর সেটা যদি হয় রাষ্ট্রের, সেটি আরো বড় আনন্দের বিষয়। সত্যিকার অর্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ২০০৯ সালে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনের।
সেখানে আমি নির্বাচিত হয়ে ১৪ বছর ধরে প্রায় তিনবারের মতো কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা-২ এর মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।’
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালেও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন পরবর্তীতে আমাকে বিবেচনায় রাখবেন। আমি সেই প্রত্যাশায় আছি। তিনি একটি কথা বলেন- যার সাথে তৃণমূলের যোগাযোগ আছে, মানুষের যোগাযোগ আছে, মানুষের সাথে যে সংযোগ স্থাপন করেছে, যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, দলের প্রতি অনুগত আছে, দলের নিবেদিত কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে, এই ধরনের নেতাকে তিনি দল থেকে মনোনয়ন দেবেন।
ঢাকা-২ এর মানুষের সাথে আমার নিবিড়ভাবে যোগাযোগ আছে, আপনারা (সাংবাদিকরা) মাঠে গেলেও জানবেন। সেজন্য আমি আশাবাদী মানুষের যে দাবি, আমার নেতাকর্মীদের যে প্রত্যাশা, সে প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আমাকে দলের মনোনয়ন দেবেন।’
বিএনপির শাসনামলে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানির কথা তুলে ধরে এ তরুণ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি রাজনীতি করি। আমি সেই ১৯৮৮ থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি, এখন আওয়ামী লীগ করছি। দুঃসময়, সুসময়, সব সময়গুলো আমি দেখেছি। দুঃসময়ে কেরানীগঞ্জে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আমার পরিবার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০১-২০০৬ সাল কেরানীগঞ্জের আওয়ামী লীগের পরিবারটাকে রীতিমতো দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে দিয়েছিল আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি জোট সরকার। এখানে প্রায় সাড়ে ৪০০ মামলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়েছিল। ঘরছাড়া করেছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। সেখানে আমাদের প্রিয় নেতা, ঢাকা-৩ এর সংসদ সদস্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নির্দেশনায়, তার আর্থিক সহযোগিতায় প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে আমরা মামলা, তাদের পরিবারের দেখভাল থেকে শুরু করে কাজগুলো আমরা করেছি। তাদের প্রত্যেকটি সমস্যায় পাশে থেকেছি। নেতাকর্মীদের সেই দুঃসময়ে আমরা সহযোগিতা করেছি। তার ফলশ্রুতিতেই ২০০৮ সালে মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এমপি নির্বাচিত হন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। কেরানীগঞ্জে আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করেছি, সেখানে স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব কিছু আজ উন্নতির দিকে এগিয়ে গেছে। পদ্মা সেতু হবার পরে কেরাণীগঞ্জ ঢাকা-২ এর গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’
নির্বাচিত হলে ঢাকা-২ আসনের মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমি সাড়ে ১৪ বছরে প্রচুর কাজ করেছি। যদি সংসদে যেতে পারি, আমাকে দল যদি নমিনেশন দেয় ঢাকা-২ কে একটি সুন্দর নগর করতে চাই। যেখানে ঢাকা-২ এর সমস্ত মানুষের ঢাকামুখী না হয়ে নিজের এলাকাতেই যেন থাকতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার কনসেপ্ট, সেই কনসেপ্টকে ধরেই আমি কাজ করতে চাই। মানুষের সকল সুবিধা যেন তার এলাকাতেই থাকে, সে লক্ষ্যে আমি কাজ করব। একটি সুন্দর পরিকল্পিত নগর করার জন্য আমার পরিকল্পনা আছে।’