অনলাইন ডেস্ক:
নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানের ক্ষেত্রে লেহি আইন প্রয়োগের প্রস্তাবে সম্মতি জানাচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসংক্রান্ত বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এখানে চুক্তির বিষয় নেই, সম্মতি জানানোর বিষয় আছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানানোর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই সম্মতি জানালে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে তাদের অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে কারো ব্যাপারে আপত্তি থাকলে তা আগেই জানিয়ে দেবে। অন্যদিকে বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের সূত্র জানতে ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাইবে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, লেহি আইন প্রয়োগের সঙ্গে র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সরাসরি কোনো সম্পর্ক তাঁরা দেখছেন না। লেহি আইনের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র এ মাসের প্রথম দিকেই বাংলাদেশকে অবহিত করেছিল।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সেটি নিয়ে আলাদা কাজ চলছে। সেখানেও অনেক বিধান, আইনের বিষয় আছে। তালিকা থেকে কিভাবে নাম বাদ দেওয়া যায়, কী কী শর্ত আছে, তা আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ল ফার্মকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ও থাকতে পারে। সেগুলো আমরা দেখছি।’
লেহি আইন বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এতে সম্মতি জানালে আমাদের কী লাভ, মৌলিক যে নীতিগুলোর ভিত্তিতে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পরিচালিত হয়, সেগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’
সচিব বলেন, মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং একই সঙ্গে সন্ত্রাস ও অন্যান্য ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের ব্যাপারে ছাড় না দেওয়ার নীতি আছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে বাংলাদেশের লক্ষ্য অভিন্ন। সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা চলছে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সবার জন্য যাতে ভালো হয় এবং আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা চলতে পারে, সে বিষয়ে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৬৫০ কোটি টাকা অনুদানের ক্ষেত্রে লেহি আইনের প্রভাব সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সম্ভবত সে ধরনের কিছু হবে না। তবে আমাদের সামনে যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বা কেনাকাটার পরিকল্পনা আছে, সেগুলোর ওপর হয়তো প্রভাব পড়তে পারে।’
লেহি আইন নিয়ে এখন সম্মতি জানিয়ে আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘চুক্তি ঠিক না। লেহি আইনটি তো ওদের, ১৯৬১ সালের। এটিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, আরো অনেক দেশকেই তারা যুক্ত করেছে। সে অনুযায়ী, সবাই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আমরাও সেই হিসেবে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রকে সম্মতি জানানোর ক্ষেত্রে ভাষাগত বিষয়ে কাজ করছে, যাতে এ দেশের স্বার্থের বিষয়গুলো সুরক্ষিত থাকে।
সচিব বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে আগাম আলোচনার সুযোগ থাকবে। যদি কোনো অভিযোগ থাকে কোনো একটি বিশেষ সংস্থার বিরুদ্ধে, তখন আমরা স্বাভাবিকভাবেই তা আগাম জানতে চাইব। ওরা যদি বলে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে তখন আমরা বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের উৎসগুলো চাইব।’
পররাষ্ট্রসচিব আরো বলেন, ‘আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের যেন যথেষ্ট সময় থাকে। যেখানে অভিযোগ থাকবে, সেখানে আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি, আমাদের অবস্থান কী, সেগুলো আমরা তাদের জানাব।’
র্যাব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘র্যাব নিয়ে অনেকের উদ্বেগ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপসহ অন্যান্য আলোচনায় আমরা এ বিষয়ে জবাব দিয়েছি। জাতিসংঘের ইউপিআরসহ অন্যান্য কাঠামোতেও এ বিষয়গুলো এসেছে।’