সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত নদী ও ছড়াগুলো দিয়ে পাহাড়ী ঢলের সাথে ভেসে আসা কয়লার গুড়া ও চুনাপাথর উত্তোলন ও বিক্রি করে ৫০ হাজার শ্রমিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করলেও গত কয়েক বছর ধরে বিজিবি’র বাধার মুখে সঠিকভাবে উত্তোলন ও পরিবহন করতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও সঠিকভাবে পরিবহন করতে না পেরে এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরের সীমান্ত নদী ও ছড়া থেকে নির্বি ঘ্নে বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলন, পরিবহন ও বিক্রির দাবী ভুক্তভোগীদের।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ী ঢলের পানির সাথে ভেসে আসা কয়লার গুড়া স্থানীয়ভাবে যাকে বাংলা কয়লা হিসেবে পরিচিত এবং চুনাপাথর পানি ও মাটির নীচ থেকে কোদাল,বেলছা, ঠেলাজাল ও ছালুন দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে উত্তোলন করছেন শত শত নারী পুরুষ। উত্তোলিত বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে প্রতিদিন ৩-৫শ টাকা রোজগার করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছেন তারা। উত্তোলণে নিয়েজিত শ্রমিকরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলন করতে গেলে বিজিবি’র সদস্যরা বাধা দেন এবং কোন কোন সময় দৌড়াইয়া তাদেরকে বাড়ীতে নিয়ে যান। ফলে তাদের জীবন জীবিকায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
স্থানীয় কয়লা শ্রমিক দিলবাহার জানান, আমাদের জায়গা জমিতে পাহাড়ী বালি, চুনাপাথর ও কয়লা পড়ে নষ্ঠ হয়ে গেছে। কোন ফসল হয় না। ইমফোর্টের মাধ্যমে আগে কয়লা আসতো সেখানে কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতাম। বর্তমানে ইনফোর্ট বন্ধ থাকায় বাংলা কয়লা ওচুনাপাথর উত্তোলন করে কোনমতে বেচে আছি। বর্তমানে বিজিবি’র সদস্যরা বাধা দেয়ায় কোন ব্যবসায়ী বাংলা কয়লা কিংবা চুনাপাথর কিনতে চায় না। আমরা খুব কষ্ঠে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদার করছি, আমাদের দেশের ভেতরেনির্বিঘ্নে বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলন করে বিক্রির সুযোগ চাই। আমরা চুরি করি না।
কষ্ট করে জীবন বাজি রেখে পানিতে ডুবিয়ে এসব কয়লা আহরন করি।
ছাড়াগাও গ্রামের দিনমজুর রহিম জানান, আমরা রাতের আধারে ভারতে গিয়ে কয়লা কিংবা চুনাপাথর আনি না। দেশের ভেতরে আমাদের জায়গা
জমি উপর থেকে দিন দুপুরে কয়লা চুনাপাথর কুড়াইয়া তুলি কিন্তু বিজিবি’র সদস্যদের বাধার কারণে এসব বিক্রি করতে পারছি না। কারণ ব্যবসায়ীরা এসব মাল নিতে পারে না।
চানপুর গ্রামের হতদরিদ্র রুবেল জানায়, কি করে কামু, দেশে ত কোন কলকারখানা নাই, ব্যবসা বানিজ্যও বন্ধ। আগে কয়লা কোয়ারীতে কাম করতাম সেটাও বন্ধ। চানপুর ছড়াতে গিয়ে মাটি কুইড়া কিছু বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর উঠাই বেছতাম। এখন সেটাও বন্ধ। বিজিবি’র সদস্যরা দৌড়াইয়া বাড়িতে নিয়ে আসে। তাদের কথা না শুনলে মারপিটও করে।
শ্রীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাসান মিয়া জানান, আমাদের দেশে কোন শিল্পকলকারখানা নাই। পাহাড় থেকে বালি পইড়া ফসলী জমিও নষ্ট হয়ে গেছে। হাজার হাজার বেকার নারী পুরুষ পাহাড়ী ছড়াগুলোতে মাটি খুড়ে বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর তুইল্লা বেইচ্ছা সংসার চালায়। গত কয়েক বছর ধরে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা এসে তাতে বাধা দেয় এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের কাছ কিনে কিছু লাভ করতে চাইলেও পারে না। কারণ তাদের ক্রয়কৃত বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহণে বিজিবি বাধা দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী আমাদের এলাকার সাধারন মানুষ যাতে নির্বিঘেœ বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর তুলে বিক্রি করে জীবন জীবিকা চালাতে পারে সে দেখি নজর দিন। আমরা চাই এলাকার মানুষ শান্তিতে বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলন করুক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে বিনা বাধায় এসব মালামাল পরিবহন করতে পারে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন জানান, গত বছর আমি কিছু বাংলা কয়লা কিনে খুবই ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। হক পয়সা দিয়ে মাল কিনে পরিবহন করতে পারি না। নানান জায়গা ধরনা দিতে দিতে জান শেষ। এ বছর বাংলা কয়লা কিংবা চুনাপাথর কিনার আগ্রহ নাই।
কুড়িয়ে তোলা বাংলা কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলনের বিজিবি’র সদস্যদের বাধার বিষয়ে ২৮ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লে.কর্ণেল মাহবুবুর রহমান এর বক্তব্য জানতে চাইলে বার বার কল দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার ছড়াগুলোতে পাহাড়ী ঢলের পানির সাথে ভেসে আসা কয়লা ও চুনাপাথর কুড়িয়ে হাজারো শ্রমিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। কয়লা, পাথর বিএমডি’র নিয়ন্ত্রনাধীন। আমি নিজে উপস্থিত থেকে দেখেছি নারী পুরুষ সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত মশারী জাতীয় জাল দিয়ে পানি ও মাটি সেকে কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলন করে দৈনিক ৪-৫শ টাকা রোজগার করছে। মানবিক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি না।