সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন টানা দুইবারের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পাশাপাশি তিনি সিসিক নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন আখ্যা দিয়ে তাতে অংশ না নিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শনিবার (২০ মে) বেলা সাড়ে ৩টায় নগরের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে জনতার সমাবেশ করে এই ঘোষণা দেন আরিফুল হক। তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন তা জানতে দুপুর থেকেই রেজিস্ট্রারি মাঠ কানায় কানায় ভরে ওঠে এ সময় আরিফ আরিফ স্লোগান দিতে থাকেন উপস্থিত জনতা।
তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ সময় বলেন, ‘সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের নাগরিককে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের না করার জন্য আমার অনুরোধ রইল। আমি অনুরোধ করব, যারা গুম, খুন হয়েছেন, যারা এই আন্দোলনের জন্য শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য হলেও, তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি না দয়া করে আপনার কেউ নির্বাচনে যাবেন না।’
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন পেয়ে এবং আপনাদের অভূতপূর্ব ভালোবাসা ও দোয়ায় গতবার নানা প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমি নির্বাচনে মেয়র হয়ে আপনাদের খেদমত করার সুযোগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘টানা কয়েকবার সিলেট সিটি করপোরেশন কাজের মাধ্যমে প্রথম হওয়ার সম্মান অর্জন করেছে। এই অজর্ন নগরবাসীর। সুতরাং যারা ঢালাওভাবে এসব অভিযোগ করেছেন তাদের এসব হয়তো জানা নেই। মূলত তাদের এ বিষয়ে জ্ঞানের অভাব থেকে তারা এসব বলছেন।’
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্বাচনের পরিবেশ আছে? নাই। বিশ্বের উন্নত দেশ যখন ইভিএমকে না বলে দিয়েছে, দেশের আপামর জনগণ যেখানে ইভিএমকে নাকচ করেছে সেখানে তারা সিসিক নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে এসেছে। এটা কিসের লক্ষণ? এটা আরেকবার ডাকাতির লক্ষণ।’
সাবেক মেয়র আরিফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন চাইত তাহলে ছয় মাস আগে ইভিএম নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারত, কিন্তু করেনি। কারণ তারা চায় না সুষ্ঠু নির্বাচন।’ তিনি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘সিলেটের যেকোনো ইউনিয়নে ভোট নিয়ে দেখুন ৯৯ ভাগ মানুষ ইভিএমকে না বলবে।’
নির্বাচনকে প্রভাবিত করার প্রস্তুত নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি এ সময় বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে গ্রুপিং চলছে। কিভাবে ভোট ডাকাতি করা যায় সেটার পরিকল্পনা চলছে। পুলিশ বাহিনীতে ইতিমধ্যে রদবদল হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শুধু তা-ই নয়, এখনো আমি মনোনয়ন ফরম কিনিনি। নির্বাচন করব কি করব না জানাইনি। তার আগেই আমার নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীদের একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বাসাবাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা কি নিরপেক্ষ নির্বাচনের নমুনা?’
নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আরিফ বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানাই। যারা কোনো রাজনীতি করে না তাদেরও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমি যেসব এলাকায় গেছি আমার পাশে যাদের ছবি দেখা গেছে। সেই ছবি দেখে তাদের বাসায় গিয়ে ধরা হয়েছে। এভাবে তো আমি আমার জনগণকে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলে দিতে পারি না।’
তিনি জনগণ ও গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমি জানি আমার ওপর ষড়যন্ত্র হতে পারে। আরিফুল হক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। আমার বাসা থেকে নিরাপত্তা সরিয়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু আমার আল্লাহ আমার সঙ্গে আছেন, নগরের জনগণ আমার সঙ্গে আছেন। আমি ভয় পাই না।’
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন