সিলেট প্রতিনিধি:
সিলেটে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদ হত্যার বিচারের দাবিতে অবশেষে সেই পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন রায়হানের মা ও স্বজনরা।
@@@@রায়হান হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন নিহতের মা সালমা বেগম।
আজ সকাল ১১ ঘটিকা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনের রাস্তায় বসে পড়েন সালমা বেগম। এসময় আশপাশের বাসিন্দারাও তাদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে অনশনে অংশ নেন। অনশনে অংশগ্রহণকারীরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অনশন শুরু করেন। তাদের হাতে ছিল ‘আমার ছেলে কবরে, খুনি কেন বাইরে?’ ‘বোন বলে ডাকবে কে? আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে’, ‘খুনি এসআই আকবরের ফাঁসি চাই’ লেখা পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। এর আগে, রায়হান হত্যার বিচারের দাবিতে টানা ১৩ দিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।
গত ১১ অক্টোবর রায়হানকে হত্যার পর থেকেই পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে টানা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে এরআগে সংবাদ সম্মেলনকরে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন মা সালমা বেগম। তাতেও কাজ না হওয়ায় আজ থেকে অনশন শুরু করেছেন তিনি।প্রসঙ্গত গত ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান। ময়না তদন্ত শেষে ওই দিন দিবাগত রাত বাদ এশা পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৪) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান। ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এরপর পুলিশের গঠিত কমিটির তদন্ত রিপোর্টে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায়। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। এ মামলায় ২০ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও ২৪ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন মুখর হয়ে পড়ে গোটা সিলেট। সিলেট মহানগর পুলিশকে নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই সমালোচনার মুখে বুধবার (২২ অক্টোবর) মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়। আর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূইয়া ১২ অক্টোবর থেকে পলাতক রয়েছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টা ৫০মিনিটে মারা যান তিনি।
রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।