সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
শারমিন আক্তার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শারমিন আক্তারের স্বামী শ্যামল ওরফে রাজু শেখ (২৭) কে গ্রেপ্তার করেছে সিরাজদিখান থানা পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের কাঠালতলী গ্রাম থেকে লাশ উদ্ধারের পর। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে। গতকাল শনিবার (১৫ মে) ঢাকার হাজারীবাগ থানার লালবাজার এলাকা থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে শ্যামল ওরফে রাজুকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামি শ্যামল ওরফে রাজু শেখ সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা (চালতাতলা) গ্রামের সিরাজ শেখ ওরফে রহিম ওরফে ফকির চাঁন ও মাতা শেফালী বেগমের ছেলে। নিহত শারমিন আক্তারের স্বামী।
উল্লেখ্য,গত বুধবার ১২ মে সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের কাঁঠাতলী মোড়ল ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন নির্মাণাধীন শাকিল মৃধার ভবনের পরিত্যক্ত কক্ষে। একই গ্রামের হাবিব শেখের স্ত্রী শাহনাজ (৩০) ওই কক্ষে রাখা শুকনো গোবর আনতে গিয়ে যুবতীর লাশ দেখতে পায়। শাহানাজ দৌড়ে বাহিরে এসে স্থানীয়দের জানালে, স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। ১১টায় সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
অজ্ঞাত যুবতীর লাশ স্থানীয়রা পরিচয় নিশ্চিত না করতে পারায়। পুলিশ লাশের পরিচয় নিশ্চিত করতে সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি টিমকে খবর দেয়। সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি টিম বেলা ১টায় ঘটনাস্থলে আসে। সিআইডি অজ্ঞাত লাশের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ওই নারীর পরিচয় নিশ্চিত করে।
স্মার্ট কার্ড অনুযায়ী নাম শারমিন আক্তার (২৭) পিতা মৃত্যু আব্দুল জব্বার গাজী, মাতা মন্তাজ বেগম, তেজগাঁও থানা উত্তর বেগুন বাড়ি নং২৪ ওয়ার্ড ১২ নং গলি। স্থায়ী ঠিকানা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়ন কর্ণপুর গ্রাম।
শারমিন আক্তারের মা, পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারে তার মেয়ের লাশ সিরাজদিখান থানা এলাকায় পাওয়া গিয়েছে। গত ১৩/৫/২০২১ বৃহস্পতিবার সিরাজদিখান থানায় মমতাজ বেগম বাদী হয়ে শ্যামল ওরফে রাজু শেখের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা (নং১৩) ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে শারমিন আক্তার ( ২৭) সহ উত্তর বেগুনবাড়ির সিদ্দিক মাস্টারের ঢাল (হাবিব মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া) ঢাকার তেজগাঁওয়ে বসবাস করত। শারমিন আক্তার তেজগাঁও এলাকার সাবান ফ্যাক্টরিতে চাকরী করতো। গত ১বছর পূর্বে উক্ত আসামি রাজুর সাথে শারমিনের প্রেমের সম্পর্কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাহারা বাদীর গলিতে অন্য একটি বাসায় ভাড়া থাকতো। কিছুদিন যাবত তাদের মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়া মনোমালিন্য চলছিল। প্রায় সময়ই ঝগড়া-বিবাদ হত। গত মঙ্গলবার ( ১১/৫/২০২১ ) সন্ধ্যার পূর্বে তারা দুজন তেজগাঁও বাসা থেকে বাহির হয়। গত বুধবার ১২/৫/২০২১ তারিখ সকাল সাড়ে ১০টার সময় বাদীর মেয়ের স্বামী বাদীর বাড়িতে আসিয়া জানায় যে, আপনার মেয়ে বাড়ি থেকে রাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছে তাহাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাদী মমতাজ বেগম বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পাই নাই।
১২/৫/২০২১ সিরাজদিখান থানা পুলিশের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন যে। সিরাজদিখান থানা পুলিশ বাদীর মেয়ের লাশ উদ্ধার করিয়া অজ্ঞাতনামা হিসেবে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। উক্ত সংবাদ পাওয়ার পর হইতে বাদীর মেয়ের উক্ত আসামীকে এলাকায় দেখা যায় নাই। উক্ত সংবাদ পাইয়া বাদি সিরাজদিখান থানায় আসিয়া বাদীর মেয়ের ছবি দেখিয়া লাশ সনাক্ত করেন এবং জানতে পারেন যে, সিরাজদিখান থানাদিন জৈনসার ইউনিয়নের কাঁঠাতলী সাকিনস্থ শাকিল মৃধার নির্মাণাধীন একতলা বিল্ডিং এর ভিতরে বাদীর মেয়ের মৃতদেহ পড়ে ছিল।
বাদীর মেয়ের গলায় একটি লাল রঙের ওড়না দ্বারা পেঁচানো এবং মুখে বালুভর্তি অবস্থায় ছিল। ধৃত আসামি তার অজ্ঞাত নামা সহযোগীদের সহায়তায় ১১/৫/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ৮টা ঘটিকা হইতে ১২/৫/২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ৬ঘটিকা মধ্যে যে কোনো সময় বাদীর মেয়েকে যেকোন উপায়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে উক্ত স্থানে ফেলে রাখে মর্মে বাদী তাহার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন জানান, আমরা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে এজাহারভুক্ত আসামি শ্যামল ওরফে রাজুকে দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শেমল ওরফে রাজু শেখ খুনের কথা স্বীকার করে। গতকাল রোববার দুপুরে শ্যামল ওরফে রাজু শেখকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। বিজ্ঞ আদালতে আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে ।
দক্ষ ও প্রযুক্তি নর্ভির জনশক্তি তরৈি করবে ‘সীমান্ত