অনলাইন ডেস্ক:
টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পর সামান্য কমেছে ডিমের দাম। তবে তা এখনো খুচরা বাজারের ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। দাম বাড়ায় ক্রেতারা অনেকে ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
দুই দিন আগেও খুচরা পর্যায়ে ডিমের ডজন ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা।
গতকাল শুক্রবার ডজন ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ায় বাজারে ডিমের চাহিদা কমেছে। ক্রেতারা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম এখনো তাঁদের নাগালের বাইরে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, উত্তর বাড্ডা ও শাহজাদপুর কাঁচাবাজার এলাকার পাইকারি ও খুচরা দোকানীরা এসব কথা বলেন।
খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, হালিপ্রতি খামারের মুরগির লাল ডিম ৪৮ টাকা, ডজন ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ২১৫ থেকে ২২৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ থেকে ২৪৫ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘ডিমের দাম এখনো নাগালের বাইরে। তাই ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে। আগে সপ্তাহে এক ডজন ডিম লাগত, দাম বাড়ায় হাফ ডজনে কাজ চালাতে হচ্ছে। ’ তিনি বলেন, ‘খুচরা দোকানে লাল ডিমের ডজন কিনতাম আগে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। আজ (গতকাল) ১৪৮ টাকা। ’
ডিমের এলাকাভিত্তিক পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে ডিম বিক্রি অনেক কমে গেছে। ক্রেতারা ডিম কেনা কমিয়েছেন। তাই খুচরা বিক্রেতারা তাঁদের কাছ থেকে আগের মতো আর ডিম কিনছেন না। এতে ব্যাবসায়িকভাবে তাঁরা লোকসানের মুখে।
কারওয়ান বাজার এলাকার একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘ডিমের দাম ডজনে পাঁচ-ছয় টাকা কমেছে। তবে আমাদের ক্রেতা কম। আগে যেখানে গড়ে পাঁচ হাজার ৫০০ পিস করে ডিম বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে চার হাজারে। আগে একটি মুদি দোকানে কম করে হলেও প্রতিদিন ৩০০ পিস ডিম দেওয়া যেত। এখন ১৫০ থেকে ২০০ পিসে নেমে এসেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদা না থাকায় কম ডিম নিচ্ছেন। দাম বাড়ায় ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদেরই। ’
বাড্ডা এলাকার একজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, ১৪৮ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করছেন। ডিমের দাম বাড়ায় চাহিদা কমেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ তো আর ডিম কিনছেন না।
চট্টগ্রামে ডিমের দাম কমেছে
চট্টগ্রামের দুই আড়ত পাহাড়তলি ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৪৫ টাকা কমেছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয় রেকর্ড দাম ১৫০ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘খামারিরা দাম কমানোয় আমরাও দাম কমিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে দাম বাড়ানোর জন্য খামারির চেয়ে আড়তদাররাই বেশি দায়ী। ’
পাহাড়তলিতে ডিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জান্নাত স্টোরের মালিক বলেন, আড়তে ডিম বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। চাহিদা কমে আসায় বিক্রি দাম কমে যাওয়াটা সোজা হিসাব।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ও রিয়াজউদ্দিন বাজারেও প্রতিদিন রাত ৯টায় ডিমের দাম নিয়ে বৈঠকে বসেন আড়তদাররা। সেখানেই ঠিক হয় পরদিন কত দামে বিক্রি হবে ডিম।
একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কথা বলতে চাননি। এ ব্যাপারে রিয়াজ উদ্দিন বাজার ডিম আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘দাম নির্ধারণে প্রতিদিন বৈঠক হয় ঠিকই, কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অনেক দিন ওসব থেকে দূরে আছি। ’
ডিমের চাহিদা কমার চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের অভিজাত পাইকারি বাজার কাজীর দেউড়ীতে। সেখানে ডিমের বড় পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, দাম বাড়ার পর ডিম বিক্রি অর্ধেকের বেশি কমেছে। আগে দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পিস ডিম বিক্রি হতো। এখন এক থেকে দেড় হাজার পিস বিক্রি হচ্ছে।
সাভারে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। যেখানে দুই দিন আগেও প্রতি ১০০ ডিম বিক্রি হতো এক হাজার ৫০০ টাকা দরে। সেখানে এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে সেই ৯০০ টাকায়। আড়তে প্রতি ডিমের দাম কমেছে আড়াই টাকা। প্রভাব পড়েছে খুচরা ও পাইকারি বাজারেও। এখন হালিপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়, যা বেড়ে ৫৫-৫৬ টাকা হয়েছিল।
সাভার পৌর ডিম ব্যবসায়ী সমিতির বাজারে গত বৃহস্পতিবার রাতে ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভায় ১০০ ডিমের দাম ৮০ টাকা কমেছে। বুধবার রাতেও ৭০ টাকা কমেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিমের দাম কমতির দিকে। আরো দাম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দাম বাড়ার বিষয়টি আমরা নজরদারিতে রেখেছি। প্রয়োজনে অসাধু ব্যবসায়ী বা আড়তদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন