জেলা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর বর্ষীয়ান সদস্য, সিলেটের কৃতি সন্তান সাবেক অর্থমন্ত্রী, সিলেট-১ আসনের সাবেক সাংসদ, দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক, আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছন বাংলাদেশ কৃষক লীগ সিলেট মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ।
এক শোক বার্তায় সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুর রকিব বাবলু তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
নেতৃবৃন্দ শোক বার্তায় বলেন, ‘সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুধু সিলেটেরই নয়, তিনি ছিলেন সমস্ত বাংলাদেশের জন্য এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ও গর্ব। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত অবস্থানে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।
তারা আরো বলেন, ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসের ইকনোমিক কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে তখন চলছে মুক্তির সংগ্রাম। পাকিস্তানের হয়ে কাজ করা ছেড়ে দিলেন এই কূটনীতিক। শুরু করলেন বাংলাদেশের পক্ষে অন্য এক লড়াই। অনেকেই তখন সতর্ক করে বলেছিলেন, “এই যে পাকিস্তানের পক্ষ ছেড়ে দিলে, কোনোদিন কি আর ঢাকায় যেতে পারবে?” জনাব মুহিত পরে বলেছিলেন, “বিশ্বাস ছিলো, একদিন স্বাধীন দেশে ফিরতে পারবো।” একাত্তরের জুন মাসে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক-রাজনৈতিক মহলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের পহেলা আগস্ট নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে যে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদশ’ হয়েছিলো তা সফল করতেও প্রচারণা চালিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনিভাবে পরবর্তীকালে দীর্ঘ কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। লেখালেখি করেছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকেও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। সাহিত্য পড়ে আসা মুহিত অর্থনীতির জটিল জগতে জড়িয়ে গিয়েও জীবনের অন্য রঙগুলো থেকে খুব বেশি দূরে সরে যাননি কখনো। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন বাপার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মন্ত্রিত্বের শত ব্যস্ততার মাঝে তাকে কখনো দেখা গেছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের আয়োজনে, কখনো আবার চারুকলার বকুলতলায় নবান্ন উৎসবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য ২০১৬ সালে আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে সরকার।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত (৩০ এপ্রিল) রাত ১২:৫৬ ঘটিকায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল মাল আবদুল মুহিত মারা যান। ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার আব্বা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও মাতা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী। মা-বাবা দুইজনই তৎকালীন সিলেট জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে তার অবস্থান তৃতীয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র, এক কন্যা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।