স্টাফ রিপোর্টার:
রাজমিস্ত্রীর যোগালী থেকে সোর্স-সাংবাদিকসহ বহুরপ ধারণ করা রেজাউলের অন্যায়-অপকর্মের সচিত্র প্রতিবেদন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ করার জেরে দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় জনগণকে হয়রানি, পুলিশের সোর্সগিরি ও হলুদ সাংবাদিকতা করে দাপিয়ে বেড়ানো রেজাউল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
গত ১৮ অক্টোবর সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(৩)(ক), ২৯(১) ধারায় মামলাটি দায়ের করার পর শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত ওইদিনই মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘দৈনিক একুশে আলো’ এর সম্পাদক সেলিম পারভেজ, ‘দৈনিক ফ্রনটিয়ার’ এর সম্পাদক আব্দুল মালেক, ‘দৈনিক একুশে আলো’র রিপোর্টার হাফেজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘হোয়াইট নিউজ’র বার্তা প্রধান ইফতেয়ার রিফাত ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সময়কাল’ এর প্রকাশক শরীফ মাহমুদকে বিবাদী করা হয়েছিল।
জানা গেছে, পুলিশের সোর্সগিরি করে সাংবাদিকের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন রেজাউল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। রাতারাতি তিনিই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা, কখনো গ্যাসফিল্ডের ডিজিএম বা তাঁর প্রতিনিধি বা গ্যাস ফিল্ডের বা সরকারি কর্মকর্তা বনে গিয়ে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে বেশ কয়েকবার সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের কয়েকজন নিরীহ যুবকদের ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে মোটা টাকা আদায় করেছেন।
এছাড়া সরকারের প্রণোদনা দেয়া মৎস্যজীবি কার্ড ও সেলাই মেশিন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বাসায় ডেকে এনে এক যুবতীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুানালে মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া গত বছর বিজয়নগর পাহাড়পুর ইউনিয়ন, জেলা সদরের ঘাটুরা, সুহিলপুর, নাটাইসহ বেশ কয়েক জায়গায় সাংবাদিকতা-সোর্স-কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করতে গেলে কয়েকবার গণধোলাইয়ের শিকারও হয়েছেন তিনি। এসব ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পুলিশের সাথে তার সখ্যতা থাকায় থানায় পা মাড়াননি ভুক্তভোগীরা। প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করে থানায় গিয়েও কোনো সুফল পাবেন না, তাই ওসব ভিডিওতে ভুক্তভোগীরা রেজাউলের অপকর্মের ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়ে গেছেন।
ইতিমধ্যে রেজাউলের গ্রাম জেলা সদরের বাকাইলবাসীও গ্রামবাসীকে জ্বালাতন, হয়রানি-নির্যাতনের অভিযোগে গ্রামচ্যুত করেছে অনেক আগেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুশীল সমাজ, সাংবাদিক মহল, বোদ্ধাগণ মনে করছেন, জীবনে স্কুলের বারান্দায় না যাওয়া রেজাউলের মতো ছেলে সোর্স হয়ে সাংবাদিকতার আড়ালে যদি হলুদ সাংবাদিকতায় মেতে উঠে, তাহলে এটা জাতির জন্য লজ্জাকর বিষয়। রেজাউলকে কে বা কারা সাংবাদিকতার কার্ড দিল- এসবও খতিয়ে দেখা উচিত। পেছনের হলুদগুলোকে সামনে না আনলে গন্ডমূর্খ রেজাউলের মতো আরও বহু রেজাউল বেরিয়ে আসবে। জাতিকে বারবার লজ্জায় ফেলবে।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিছুদিন পরপরই একেকজন সাংবাদিক ধুমকেতুর মতো উদয় হন। চতুর্দিকে একটি বিশৃঙ্খলা, সাংবাদিকতার চরম মানহানি ঘটিয়ে ‘বস’দের আড়ালে চলে যান রেজাউলের মতো হলুদ সাংবাদিকরা। এমন চিত্র গত ৫ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্তত ৩টি ঘটেছে। এসব ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রকৃত সাংবাদিকরাও অস্বস্তিতে রয়েছেন। একের পর এক রেজাউলের আবির্ভাব আর দেখতে চায় না ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেই শুরু হোক হলুদ সাংবাদিক নির্মূলের প্রতিবাদ- দাবী জেলাবাসীর।
রেজাউলের অপসাংবাদিকতার নানা উদাহরণ তুলে ধরে সাংবাদিক হাফেজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন খান বলেন- গন্ডমূর্খ রেজাউল সদর থানার কয়েকজন এসআইয়ের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই তাকে থানার ভিতরে ‘ফুলবাবু’ সেজে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। পুলিশ ক্লাবের এসআইদের কক্ষে তাঁর কাজ কি প্রশ্ন করে মামুন বলেন- সে হচ্ছে কন্ট্রাক্টর, মাঝখানে একটা সেতুর মতো কাজ করে, দুইপাশে থাকে শিকার ও শিকারী। বাকাইল গ্রামসহ জেলা সদরের বহু পরিবারকে সে সর্বশান্ত করেছে। রেজাউল এই জেলা সদরের ছেলে, অথচ হুট করে একটা মোটরসাইকেলে চড়ে কালো চশমা আর কমেডি স্টাইলে শার্ট-প্যান্ট-কটি পড়ে উড়ে এসে বলছে- আমি এখন সাংবাদিক।
মামুন খান বলেন- রেজাউলের মতো গন্ডমূর্খকে যেসব ‘বস’রা সাংবাদিকতায় এনেছে বা আরও আনছে, তাদের মুখোষ উন্মোচন করে শাস্তির আওতায় না আনলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।