অনলাইন ডেস্ক:
পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট শুধু হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। সেতু কর্তৃপক্ষ অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে এই দাবি করেছে। এ কারণে সিআইডির কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, নাট হাত দিয়ে খোলা হয়নি, সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। কাজটি করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।
তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত যুবক বায়েজিদ তালহা সরঞ্জাম ব্যবহার এবং পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেননি।
পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে ভিডিও করার অভিযোগে বায়েজিদকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গতকাল সোমবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। বায়েজিদকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট, রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তের পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় করা মামলায় গতকাল তাঁকে শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক মো. সালেহুজ্জামান তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শরীয়তপুর আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বায়েজিদের ভিডিও করার সময় সহযোগী কাওসার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি ভিডিওতে নাট খোলা এবং মূত্রত্যাগ করা—মোট তিন যুবককেই খুঁজছেন সিআইডির তদন্তকারীরা। ধারণা করা হচ্ছে, যুবকরা পরিকল্পিতভাবে এসব কাজ করেছেন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি, এত বড় একটা স্থাপনার নাট হাত দিয়ে খোলা যাবে না। এতে বোঝা যায়, নাট হাত দিয়ে খোলা হয়নি, এখানে সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। ’ তবে কী ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে, তা জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, রবিবার সকাল ১০টা-১১টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। বায়েজিদ ও কায়সার দুই বন্ধু মিলে প্রাইভেট কারে করে সেতুতে যান। বায়েজিদ ড্রাইভ করছিলেন। জাজিরা প্রান্তের ৩০-৩৫ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি জায়গায় সেতুতে নামেন তাঁরা। এরপর সেখানে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে ফেলেন বায়েজিদ। এই ঘটনা ভিডিও করেন তাঁর সঙ্গী।
রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘ভিডিওতে দেখা যায়, বায়েজিদ নাট-বল্টু হাতে নিয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এবং ব্যঙ্গ করে মানুষের ফিলিংসে আঘাত করে। আমরা তাকে দ্রুত অ্যারেস্ট করি। সিআইডি মামলাটির তদন্ত করছে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা তার কাছ থেকে ডিভাইস (মোবাইল ফোন) উদ্ধার করেছি। কিছু ডিভাইস, তার আরো কিছু ভিডিও এবং আগের অ্যাক্টিভিটিজ দেখে মনে হয়েছে, এটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। ’
জিজ্ঞাসাবাদে কী জানা গেছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সব কিছু বিবেচনায় আমরা মনে করছি, এই কাজটা সে-ই করেছে, তার একটা পরিকল্পনা ছিল। বাকিটা তদন্তে আসবে। তিনটা বিষয় এ ক্ষেত্রে ঘটেছে—মানুষের ফিলিংস, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এখানে তার গিল্টি মাইন্ড (অপরাধী মনন) আছে, যে কারণে আমরা মামলা দিয়েছি। ’
তাঁর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না, জানতে চাইলে রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু আমরা তার অপরাধটাকেই গুরুত্বসহকারে দেখছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘এ ছাড়া নাট-বল্টু খোলা আরেক যুবকের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাকেও আমরা খুঁজছি। অন্যদিকে পদ্মা সেতুতে এক যুবক মূত্রত্যাগ করেছে—এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাকে আমরা শনাক্তের চেষ্টা করছি। ’
এর আগে রবিবার বায়েজিদের নাট খোলার টিকটক ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর তিনি টিকটক আইডি থেকে ভিডিও সরান এবং ফেসবুক আইডি বন্ধ করেন। এক পর্যায়ে তিনি ফোনও বন্ধ করেন। তবে সিআইডির তদন্তকারীরা তাঁকে শনাক্ত করে শান্তিনগর থেকে আটক করেন।
বায়েজিদের বাড়িতে হামলা
পদ্মা সেতুর রেলিং থেকে নাট-বল্টু খোলার ঘটনায় গতকাল বিকেল ৫টার দিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের তেলিখালী গ্রামের বায়েজিদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় বায়েজিদের ভাই মো. সোহাগ মৃধার স্ত্রী হাদিসা আক্তার এবং তাঁর এক মেয়ে উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের দেখে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা বায়েজিদের ভাইয়ের মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন