অনলাইন ডেস্ক:
কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউন শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগে সরকারের সিদ্ধান্তে গতকাল রবিবার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে গেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যে শর্ত ছিল, অর্থাৎ গ্রামে থাকা শ্রমিকদের এখনই ডেকে আনা যাবে না, সেটা ব্যবসায়ীদের অনেকে মানেননি। রীতিমতো খবর দিয়ে শ্রমিকদের কর্মস্থলে আনা হয়েছে। শনিবার সারা দিন কর্মস্থলমুখী জনস্রোত ও বিশৃঙ্খলা দেখে রাতে গণপরিবহনে ছাড় দেওয়া হয়। এ ঘটনা করোনা সংক্রমণ আরো বাড়বে বলে শঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এর আগে বিভিন্ন সময় জারি করা কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের সময় রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা খোলা ছিল। এবার ঈদ উপলক্ষে সরকারের তরফ থেকে আমরা একটা সুযোগ নিতে চেয়েছি। এদিক থেকে সরকার অনেকটা সফলও হয়েছে। গত ২৩ জুলাই থেকে টানা ৩১ জুলাই পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজনে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবাইকে আমরা ঘরে রাখতে পেরেছি। এই সময়টাতে গার্মেন্টকর্মীদেরও কর্মস্থলে যেতে হয়নি। টানা ৯ দিনের এই কঠোরতা সরকারের সিদ্ধান্তের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এর সুফলও সামনে আমরা পাব আশা করি।
বাস্তবতা হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা কখনো বন্ধ রাখা যায় না। আগে আমরাও কারখানা চালু রেখে লকডাউনে গিয়েছি। এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে বাড়তি ছুটি কাটানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় সেখানকার মার্কেটগুলো খুলতে শুরু করেছে। তাই তাদের গার্মেন্টসংক্রান্ত মালপত্রের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে যদি ঠিকমতো অর্ডারগুলো ক্রেতারা না পান তাহলে দেশের জন্য দুর্নাম হয়ে যাবে। এটা শুধু ব্যবসায়ীদের ক্ষতি নয়, দীর্ঘ মেয়াদে দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে।
না বুঝেই অনেকে সরকারের সমালোচনা করছে। সরকার ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের বিষয়ে কোনোভাবেই দ্বিধান্বিত ছিল না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যখন বৈশ্বিক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন তখন সরকার বিষয়টা আমলে নিয়েছে। তাও সুস্পষ্ট শর্ত দেওয়া হয়েছে। যেসব শ্রমিক ঢাকায় আছে শুধু তাঁদের নিয়ে কারখানা খুলতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা সরকারকে এও বলেছেন, গ্রামে থাকা শ্রমিকদের তাঁরা ঢাকায় আসতে তাগিদ দেবেন না। গ্রামে থাকা শ্রমিকরা ৫ আগস্টের পর এসে কাজে যোগ দেবেন। এতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের চাকরির কোনো সমস্যা হবে না। বিজিএমইএ, বিকেএমইএর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায়িক সংগঠনগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার পরও যেভাবে শ্রমিকরা ঢাকার দিকে আসতে শুরু করেছেন তা প্রত্যাশিত ছিল না। পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার তো চুপ থাকতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের দুর্ভোগের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার কথা বলে এক দিনের জন্য গণপরিবহন খোলার নির্দেশ দিয়েছেন।
শ্রমিকদের এমন অবস্থা দেখে আমি একাধিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বলছেন, তাঁদের মালিকানাধীন কোনো গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের ঢাকায় আসতে বলা হয়নি। অনেক খুচরা ও ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা তাঁদের কর্মীদের ঢাকায় আসতে তাড়া দিয়েছেন। এ কারণে আশপাশে থাকা অন্য কর্মীরাও ঢাকার দিকে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আবার অনেকে মনে করেছেন যাঁরা আগে কাজে যোগ দেবেন তাঁরা তাঁদের ব্যবস্থাপকদের চোখে ভালো কর্মী হয়ে যাবেন। যাঁরা উপস্থিত হতে পারবেন না তাঁরা পিছিয়ে যাবেন। বেসরকারি চাকরিতে এসব বিষয় বড় প্রভাব রাখে। এমন অবস্থা হয়েছে বলে ব্যবসায়ী নেতারা আমাদের জানিয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিষয়টা বুঝতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা কি না? আমি বলব, কোনোভাবেই এটা সরকারের ব্যর্থতা নয়। কারণ সরকারকে সবার স্বার্থ দেখতে হয়। বিজিএমইএ, বিকেএমইএর মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গে হওয়া একটা আলোচনার ওপর সরকারকে বিশ্বাস রাখতে হয়। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় একটি খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আবার তাদের মধ্যেও হয়তো এমন অনেকে আছে, যারা আমাদের দেওয়া কথা রাখেনি। এসব বাস্তবতা নিয়েই সরকারকে চলতে হয়। আর সরকার সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিন-রাত সব দিকে নজর রাখেন। যখন দেখেছেন শ্রমিকদের কষ্ট হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যারা কাজ করে না, সিদ্ধান্ত নেয় না, তাদের ভুল হওয়ারও আশঙ্কা থাকে না। সরকার সব সময় কাজের মধ্যে থাকে। ফলে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে মাঝেমধ্যে এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকে মানুষের কল্যাণ করার।