স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, জনপ্রতিনিধিরা যতটা মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পান তা অন্য কোনো পেশার মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। নির্বাচনের জন্য হোক অথবা মানুষের সেবা করার জন্য হোক, সমাজে জনপ্রতিনিধিদের মানুষের সাথে মিশে থাকতে হয়। মানুষের অভাব-অনটন থেকে শুরু করে দুঃখ-দুর্দশা এবং বিভিন্ন মতবিরোধে বিচার-সালিস করতে হয় জনপ্রতিনিধিদেরকেই। তাই জনপ্রতিনিধিরা যখন সমাজের সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পান, মানুষ তাদের সকল সমস্যা নির্দ্বিধায় তাদেরকে বলতে পারে, তখন সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আজ রবিবার ঢাকায় জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের জন্য আয়োজিত সিটি করপোরেশন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন, স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মোজাফফর, সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জন্য শুধু অর্থ বরাদ্ধের প্রয়োজন এ ধারণার বিরোধিতা করে বলেন, ‘সরকারি যেকোনো অর্থ একটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খরচ হয়, সেখানে নিজের খেয়াল-খুশিমতো খরচ করার সুযোগ নেই। অর্থ বরাদ্দের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নের সাথে মানুষের অংশগ্রহণ, যাতে সবাই নিজ নিজ সম্ভাবনাকে বিকশিত করার সুযোগ পায়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরায়ণ হলে তার সুবিধা সবাই ভোগ করবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ হলে তা টেকসই হয় না যেমন তেমনি তাতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে আরো আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ একা বেঁচে থাকতে পারে না।
সবাইকে সাথে নিয়ে আমাদেরকে টিকে থাকতে হবে।’ডেঙ্গু রোগের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি একা সচেতন হলে সামগ্রিকভাবে তা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর হচ্ছে না। পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে সবাই যখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করবে তখনই ডেঙ্গুর মতো রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
একা স্বার্থপরের মতো টিকে থাকার সময় শেষ উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজ এলাকা এবং দেশের উন্নয়নে সবাইকে সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণ এবং সচেতন হতে হবে। জনগণকে জাগিয়ে তোলা এবং সচেতন করার ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি আপনার এলাকার মানুষের যতটা কাছে যেতে পারবেন তা কোনো সরকারি কর্মকর্তা কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের জন্য পাঁচ দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা তাদের দক্ষতা এবং আইন ও বিধি সম্পর্কে জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই প্রশিক্ষণে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়েছে। যাতে আপনারা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভালো উদ্যোগগুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন এবং আপনাদের ভালো উদ্যোগগুলো রাজশাহীর কাউন্সিলরদের সাথে আলোচনা করতে পারেন।’
এ ছাড়া এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব।