বরগুনা প্রতিনিধিঃ
সম্পর্কটা প্রেমের। পুলিশের থানা থেকে প্রেমিক যুগল ছাড়া পেল মুচলেকায়। বরগুনায় ধর্ষন চেষ্টার মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে কয়েক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হতে বসেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব রায়ভোগ গ্রামের পূর্ব রায়ভোগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মিতু (১৫) কে নিয়ে। সে পশ্বিম বুড়িরচর গ্রামের আবু-সালেহ এর সাথে মোবাইল রং নম্বরের কলে প্রেমে জড়িয়ে পরেন। প্রেমে বয়স ১৫ দিন। পরে তারা প্রেমিক যুগল একসাথে পূর্ব রায়ভোগ গ্রামের সলিং রাস্তায় ঘুরতে যায় । বিপত্তিটা বাজে সেখানেই । ১টি মেয়েকে নিয়ে অপরিচিত ২টি ছেলে গ্রামে ঘোরাফেরা করায় স্থানীয়দের মনে সন্দেহ হয় । তারা মেয়ে ও ছেলে ২টিকে পূর্ব রায়ভোগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে বসিয়ে রেখে ট্রি ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ তাদের থানায় এনে জানতে পারে আবু-সালেহ’র সাথে মিতুর মাত্র ১৫ দিনের প্রেমের সম্পর্ক । আবু-সালেহ’ সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দেলোয়ার কাজীর ছেলে আর মিতু একই উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব রায়ভোগ গ্রামের পান্না আকনের মেয়ে। অপরদিকে এ বছরের ৩ এপ্রিল পূর্ব রায়ভোগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মিতু (১৫) কে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ এনে তার মা আফিয়া বেগম বাদী হয়ে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব রায়ভোগ গ্রামের কিরনের ছেলে ইয়াছিন (১৫) শাহজাহানের ছেলে ইয়াছিন (১৬) ও জিয়াউল আহসানের ছেলে ইমন (১৫) এর নামে বরগুনা থানায় নারী ও শিশূ নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে।
মামলার আসামী ওই তিন শিক্ষার্থীদের পরিবারের দাবী ধর্ষন চেষ্টার মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন আজ নষ্ট হতে বসেছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চায়।
ওই এলাকার গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) সালাম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, স্কুলের সভাপতি আমাকে ফোন দিলে আমি স্কুলে যাই। দেখি ২ টা ছেলে ও মিতু নামের ওই ছাত্রী লাইব্রেরীতে বসা । পরে পুলিশ এসে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, শুনেছি এর পূর্বেও স্কুলের ওই ছাত্রীর বেপরোয়া চলাচল নিয়ে কথা কাটাকাটির ঘটনায় বিদ্যালয়ের ১ ছাত্রসহ আরো ২ শিক্ষার্থী নামে ধর্ষন চেষ্টার মামলা হয়েছে। সত্য-মিথ্যা জানিনা। তবে ওই ছাত্রদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ হবে । সে মামলায় তারা জেলও খেটেছে।
পূর্ব রায়ভোগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আবু জাফর প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, শনিবার সকাল পৌনে ১০ টার দিকে স্কুল থেকে ১ কি:মি: দূরে সলিং রাস্তা থেকে আমার বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মিতুকে অপরিচিত দুই যুবককে স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে নিয়ে আসে। কেউ ট্রিপল ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশকে জানায়। পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হতে এলাকার চৌকিদারের সাথে কথা বলে। চৌকিদার পুলিশকে ফোন দিলে তারা এসে লাইব্রেরীতে থাকা ওই ছাত্রী মিতু ও দুই যুবকে থানায় নিয়ে যায় । ওই দিন মিতুর ক্লাশ ছিল না । সে প্রাইভেট পড়তে আসছিল। কেন সে (সলিং রাস্তায় ) এসে ছিল আমি জানতে চাইলে মিতু বলে ওর সাথে আমার মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক আছে। তাকে আমি ভালবাসি।
তিনি আরও জানান এর পূর্বেও ওই ছাত্রী মিতুকে নিয়ে ৩ শিক্ষার্থীর নামে থানায় মামলায় চলছে। আমার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন এ ঝামেলার কারণে মিতুকে টিসি দেওয়ার জন্য বলেছে। আমরা কমিটির সাথে আলোচনা করে তার এ ধরনের কর্মকান্ডের কারনে বিদ্যালয় থেকে টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এখনো চুড়ান্ত সিদান্ত হয়নি। যাতে ওই ছাত্রীর দেখাদেখি বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ঝামেলায় না পরে।
পূর্ব রায়ভোগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রতিবেদককে জানান, ওই ছাত্রীর সাথে ছেলেটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল । বয়স হয়নি তাই থানা থেকে মিমাংশা করে দিয়েছে। এর পূর্বেও ওই ছাত্রীকে নিয়ে মামলা হয়েছে।
বুড়িরচর ইউনিয়নের কামরাবাদ এলাকার ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পূর্ব রায়ভোগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমার এলাকার আবু-সালেহ নামে ১টি ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে ওই আবু-সালেহ’র বাবা আমাকে নিয়ে স্কুলে যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারি তাকে থানায় নিয়ে গেছে। পরে থানা থেকে আটক মেয়ে ও ছেলেকে মুচলেকা রেখে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে বরগুনা থানার এস আই মিহির কানিÍ জানান, মিতুর সাথে আবু-সালেহ এর রং নম্বরের মোবাইল কলে প্রেম হয়। প্রেমের বয়স ১৫ দিন। পরে তারা দু জন একসাথে ঘুরতে যায় ওই গ্রামে। তাদের ঘোরাঘুরি সন্দেহ জনক হলে স্থানীয়রা তাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে বসিয়ে রাখে। পরে ট্রিপল ৯৯৯ ফোন দিলে তাদের দু জনকে শনিবার দুপুরে আমরা থানায় নিয়ে আসি। উভয় পক্ষের পরিবারের মুচলেকা নিয়ে উধর্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের ওই দিনই ছেড়ে দিয়েছে। এর পূর্বেও নাকি ওই মেয়েটিকে নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে।