অনলাইন ডেস্কঃবাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপনে বাংলাদেশি আমেরিকানদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে ডোনাল্ড লু এ কথা বলেন। দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকানের কথা উল্লেখ করে ডোনাল্ড লু বলেন, তাদের শক্তি এবং অসাধারণ কঠোর পরিশ্রম আমাদের দুটি মহান জাতির মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি আমেরিকানরা দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তার জন্য আমরা গর্বিত।
এ প্রসঙ্গে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশি আমেরিকান উদ্যোক্তাদের কথা উল্লেখ করেন। যারা তাদের অনন্য উদ্ভাবনী শক্তি ও ধারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছেন। ‘শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ, জয় বাংলা’ বলে বক্তব্য শেষ করেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তার স্বাগত বক্তব্যে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে ও বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রদূত ইমরান বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। দুই দেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বিরাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সবার সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত ইমরান বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে দুই দেশ তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী ও এগিয়ে নিতে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করতে সক্ষম হবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নে আমরা সব বন্ধুরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করি।পরে মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যৌথভাবে অতিথিদের উপস্থিতিতে কেক কাটেন। এর আগে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত বাজানোর মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ফরেন মিশন অফিসের পরিচালক রাষ্ট্রদূত রেবেকা গঞ্জালেস, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, মার্কিন সরকার, পররাষ্ট্র দপ্তর, ইউএসএআইডি, ইউএসটিআর, এনডিআই, আইআরআই ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে নির্বাচিত স্টেট সিনেটর বাংলাদেশি আমেরিকান সাদ্দাম সেলিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করে। যার মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং আলোচনাসভা ও বিশেষ প্রার্থনা।সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। পরে রাষ্ট্রদূত জাতির পিতার আবক্ষ প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
পরে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) মুহাম্মদ আব্দুল হাই মিলটন দূতাবাসের দিনব্যাপী কর্মসূচির দুই পর্ব পরিচালনা করেন।